*নির্বাচনী রঙ্গরস : টাকা কামানোর সুবর্ণ সুযোগ*

।। মোশাররফ হোসাইন সাগর ।।
মানুষের জীবনে নিজের ভাগ্য গড়ার ও আখের গুছিয়ে নেয়ার সুযোগ বারবার আসে না। যখন আসে তখন তার সদ্ব্যবহার করতে হয়। না হলে সে সারাজীবন গরীব হয়ে রয়। তেমনি একটি সুযোগের কথা আমি তুলে ধরছি। পড়ুন সবাই, লাভবান হবেন। না হলে জরিমানা দিবো।
আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ সবার দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে। কোনো বুদ্ধিমানের এই সুযোগ হেলায় হারানো উচিত হবে না।
আমিও একজন মহাবুদ্ধিমান বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধি বেচে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। এমনকি বুদ্ধির গরমে মাথার চুল আমার সব পড়ে গিয়ে এখন আমি ‘টাকলু’ বা ’টেকোমাথা’ হয়ে গিয়েছি।
কোটি কোটি টাকা কামানোর উপায় কী তা এখন আমি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ তুলে ধরছি। সবাই পড়ুন, টাকা কামানোর সুযোগ পাবেন।
বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফলে সরকারী দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসংকটে পড়বে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকলে সেই নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। একতরফা বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীবিহীন নির্বাচন বলে গণ্য হবে। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে বর্তমানের সরকারী দল আবার সরকার গঠন করলে তা-ও বৈধতা পাবে না।
উক্ত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার প্রতিটি আসনে একাধিক ’ডামি প্রার্থী’ দাঁড় করানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যারা সেই ডামি প্রার্থী হবে তাদেরকে সরকার নির্বাচন করা বাবদ ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিবে। তাই ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামক সরকারী উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে।
কিন্তু এক জন মাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেও সেই নির্বাচন তেমন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাই সরকারী দলের জন্য আরও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রয়োজন। ’অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন হয়েছে প্রমাণ করার জন্য আরও রাজনৈতিক দল দরকার।
উক্ত প্রয়োজন পূরণ করতে যে কেউ একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার থেকে কোটি কোটি টাকা টাকা অনুদান পেতে পারে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সুযোগকে হেলায় না হারিয়ে সদ্ব্যবহার করে নিজের ভাগ্য গড়বো, আখের গুছিয়ে নিবো। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বস্তায় বস্তায় টাকা কামিয়ে নিবো।
আমার নতুন দলের জন্য একাধিক নাম প্রস্তাব করছি। যে নামের প্রতি বেশি সমর্থন পাবো সেই নামেই দল গঠন করবো। প্রস্তাবিত নামসমূহ :
১. খাঁটি বা আসল বিএনপি। ২. তৃণমূল জামায়াতে ইসলামী। ৩. খাঁটি দেশপ্রেমিক পার্টি। ৪. খাঁটি জনদরদী পার্টি। ৫ নির্ভেজাল দেশবন্ধু পার্টি। ৬. বাংলাদেশ চেতনালীগ। ৭. বাসুদ বা বাংলাদেশ সুবিধাবাদী দল। ৮. বাসুসদ বা বাংলাদেশ সুযোগসন্ধানী দল।
আপনারা পছন্দমতো নামের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করুন। নতুন কোনো যুতসই নামের প্রস্তাবও করতে পারেন।
কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, দল গঠন করলেই দলীয় পরিচয়ে নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা যাবে? তার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন লাগবে না?
কথা ঠিক। তবে তার জন্য কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ঢাকার তোপখানা রোডে অবস্থিত মেহেরবা প্লাজায় নবগঠিত তৃণমূল বিএনপির কার্যালয়ের সাথে বা আশেপাশে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেটাকে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলেই ’হুজুর হুজুর’ করে সাথে সাথে নিবন্ধন দিয়ে দিবে এবং সেই নিবন্ধনপত্রটাও কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়ে যাবে। কারণ সময় বেশি হাতে নেই।
দল গঠিত হলে সারাদেশের ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ প্রার্থীর প্রয়োজন পড়বে। কিছু কম হলেও চলবে। তবে তাতে অনুদানের টাকার অংকটা কমে যাবে। তাই আমি চেষ্টা করবো ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার।
আমার পারিবারিক সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কারখানার কর্মচারী, কাজের বুয়া, বাড়ির দারোয়ান, গাড়ির ড্রাইভার এবং শালা-শালীসহ স্ত্রীর পক্ষের আত্মীয়-স্বজন সব মিলে প্রায় শ’খানেক প্রার্থী হয়ে যাবে।
আরও বাকি থাকবে ২০০ প্রার্থী। সারাদেশের লেখক-কবিদের মধ্য থেকে এই ২০০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিবো। কারণ লেখক-কবিরাই এখন সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত প্রাণী।
আগে লেখক-কবিরা লেখালেখি করে সম্মানী পেতো এবং তা দিয়েই সংসার চালাতে পারতো। একসময় আমিও তা করেছি। বর্তমানে লেখালেখি করে সম্মানী পাওয়া তো দূরের কথা, গ্রন্থাকারে লেখা ছাপাতে উল্টো লেখক-কবিদের গাটের টাকা খরচ করতে হয়।
টাকা খরচ করে গ্রন্থ ছেপেও যদি বিক্রি করা যেতো কোনো কথা ছিল না। কিন্তু বিক্রি তো করা যায়-ই না, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে সেই গ্রন্থ বিনামূল্যে দিলেও পড়ে দেখে না। অবহেলায় ফেলে রাখে বা পুরানো কাগজের ক্রেতা ফেরিওয়ালাদের নিকট কেজিদরে বিক্রি করে দেয়। সেহেতু লেখক-কবিদেরকেই আমি প্রার্থী হিসেব মনোনয়ন দিবো। সুতরাং যেসব লেখক-কবি প্রার্থী হতে চান তারা অতিসত্বর আমার সাথে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হোন অথবা এই পোস্টের কমেন্টবক্সেও নিজের নামটি লিখে দিতে পারেন।
প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে লটারী করে তাদের বাছাই করবো। কোনো স্বজনপ্রীতি আমি করবো না।
যারা প্রার্থী হবেন তাদের জন্য সরকারের দেয়া অনুদান ২০ বা ২৫ লাখ টাকা যা-ই হোক, তার থেকে প্রতিজন প্রার্থী পাবে শতকরা ৮০ ভাগ টাকা। বাকি ২০ ভাগ আমার কমিশন এবং দলগঠন ও দল পরিচালনা বাবদ নিবো।
প্রার্থীর প্রাপ্ত টাকা থেকে মনোনয়নপত্রের সাথে জামানতের টাকা জমাদান, হাজার পাঁচেক পোস্টার ও হাজার পঞ্চাশেক লিফলেট ছাপাতে হবে। তার সাথে কিছু ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে তা রশি ও বাঁশের চটি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঝুলাতে এবং বিলি করতে হবে। কিছু লোক ভাড়া করে দু’চারটি পথসভাও করতে হবে। এসব বাবদ ২/৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। বাকি টাকা প্রার্থীর পকেটে থেকে যাবে।
উক্ত টাকা দিয়ে প্রার্থী প্রথমে তার লেখা কবিতা/গল্প/উপন্যাস ছাপাবে। তারপরে চাইলে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে, ঘর-বাড়ি তৈরি করতে পারবে। কেউ চাইলে আরেকটা বিয়েও করতে পারবে।
যারা এই সুবর্ণ সুযোগটি হেলায় হাতছাড়া না করে লুফে নিতে চান তারা কমেন্টবক্সে আপনাদের সম্মতির কথা জানান।
*দলের প্রতীক : যে নামেই দল গঠন করি না কেন, আমার দলের জন্য নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রতীক হিসেবে চাইবো ১ নম্বরে বাঁশ, ২ নম্বরে নম্বরে আখ বা গেণ্ডারী, ৩ নম্বরে কলাগাছ, ৪ নম্বরে কচুগাছ এবং তা না দিলে ৫ নম্বরে চাইবো কচুরিপানা। তা-ও যদি না পাওয়া যায়, কী প্রতীক দাবি করবো বা নিবো তা আপনারাই প্রস্তাব করুন।
সবার জ্ঞাতার্থে আরও জানিয়ে দিচ্ছি, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার দলের কার্যক্রম চলবে। নির্বাচন হয়ে গেলেই অঘোষিতভাবে দলের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ফেলবো। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে উক্ত সুবর্ণ সুযোগ দরজায় এসে হাজির হলে পুনরায় দলকে সক্রিয় ও উজ্জীবিত করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবো।
*শেষ কথা : আমার দলে যোগ দিন, টাকা কামানোর সুযোগ নিন। ধন্যবাদ সবাইকে।
’রঙ্গরস’-এর সাথে প্রাসঙ্গিক দুঃখ-বেদনার একটি হৃদয়গ্রাহী সংগীত :
সারাজীবন (২) দুঃখের দহন
শুধুই সয়ে গেলাম
এই জীবনে (২) সুখের নাগাল
কভু নাহি পেলাম ॥
(ও) এক এক করে রাজা এলো
বাড়িয়ে গেল দুখ-২
যালিম রাজার দুঃশাসনে
কেড়ে নিলো সব সুখ-২
নিভে গেল (২) আশার আলো
আঁধারে বন্দী হলাম ॥
(ও) চেয়ে থাকি দূর আকাশে
ফুটবে দিনের আলো-২
নেই আলোর কোনো ঠিকানা
মেঘে ঢেকে গেল-২
পণ্ড হলো (২) সব আকাঙ্ক্ষা
আলো নাহি পেলাম ॥
(ও) বুকের মাঝে দুখ লুকিয়ে
সয়ে যাই নিশি-দিন-২
দুঃখ পেতে জন্ম আমার
দুঃখ নয় কঠিন-২
সুদিন আসবে (২) দুঃখ যাবে
আশায় চেয়ে র’লাম
রাজার দোষে রাজ্যদোষে
দুঃখ সয়ে গেলাম ॥
০৯. ১১. ২৩
গানের লিংক :

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।