বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা গত ১৭ দিনের হরতাল-আবরোধে সারা দেশে অগ্নিসংযোগের ১৫৪টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৩৫টি ঘটনায় পোড়ানো হয়েছে যানবাহন।
মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, আগুন দেওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকায়; সিলেট বিভাগে এ ধরনের নাশকতা ঘটেনি।
বাকি জেলাগুলোর মধ্যে গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে গাজীপুরে দিনের চাইতে রাতে বেশি নাশকতা ঘটেছে।
কয়েকটি ঘটনায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী-বিএনপির অফিস, কাউন্সিলরের কার্যালয়, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টারসহ বেশ কিছু স্থাপনা। পুড়িয়ে দেওয়া যানবাহনের মধ্যে রয়েছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, কভার্ডভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা, ফায়ার সার্ভিসের পানির গাড়িসহ নানা ধরনের বাহন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, দিনের তুলনায় রাতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বেশি। আগুন লাগানোর জন্য সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সময়কে বেছে নেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ জায়গায়।
২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দিনে ৬১টি এবং রাতে ৯৩টি অগ্নি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
দেশজুড়ে চলমান নাশকতার শুরু হয় ২৮ অক্টোবর। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশের দিন থেকে।
এরপর একে একে চার দফায় নয় দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে সমমনা জোট ও দলও এ কর্মসূচি পালন করছে।
২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর সারা দেশে টানা তিনদিন অবরোধ করে বিএনপি-জামায়াত। সেই অবরোধ শেষে ৫ ও ৬ এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর কর্মসূচি দিয়েছিল তারা। এরপর ১২ ও ১৩ নভেম্বর টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে মাঝে মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে আবার বুধ ও বৃহস্পতিবার পঞ্চম দফায় কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
অগ্নিকাণ্ড কবে কয়টি: ফায়ার সার্ভিস বলছে, ১৫৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনার মধ্যে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন ২৯টি ঘটনা হয়। এরপর হরতালের দিন ২৯ অক্টোবর ১৯টি এবং আন্দোলন কর্মসূচির বিরতির দিন ৩০ অক্টোবর একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
৭২ ঘণ্টার টানা অবরোধের মধ্যে ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি এবং ২ নভেম্বর ৭টি অগ্নি নাশকতা হয়। ৩ নভেম্বর অবরোধ ছিল না, ওইদিনের কোনো তথ্যও ফায়ার সার্ভিস দেয়নি।
৪ নভেম্বরও অবরোধের বিরতি গেছে, ওইদিন অগ্নিসংযোগ হয় ৬ জায়গায়। এরপর দু্ই দিনের অবরোধ ৫ নভেম্বর ১৩টি এবং ৬ নভেম্বর অগ্নি নাশকতা হয়েছে।
কর্মসূচির বিরতি গেছে ৭ নভেম্বর, ওইদিনও দুটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার দুদিনের অবরোধে ৮ নভেম্বর নয়টি এবং ৯ নভেম্বর সাতটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
১০ ও ১১ নভেম্বর শুক্র ও শনিবারে অবরোধ না থাকলেও ওই দুই দিনে ৯টি অগ্নি নাশকতা হয়েছে। এরপর চতুর্থ দফার অবরোধে ১২ নভেম্বর সাতটি এবং ১৩ নভেম্বর সাতটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
কী কী যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন: ফায়ার সার্ভিস বলছে, ২৮ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ১৭ দিনে ৯৪টি বাস পুড়েছে সারাদেশে। এছাড়া ৩টি মাইক্রোবাস, ২টি প্রাইভেটকার, ১৩টি ট্রাকে ও ৮টি কভার্ডভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। নাশকতার আগুনে পুড়েছে ৮টি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্স, ২টি পিকআপ ও ২টি অটোরিকশা।
একটি করে নছিমন, লেগুনা, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে পুলিশের একটি গাড়িতেও। এছাড়া বিএনপির ৫টি অফিস, আওয়ামী লীগের একটি অফিস, একটি পুলিশ বক্স, একটি কাউন্সিলর অফিস, ২টি বিদ্যুৎ অফিস, একটি বাস কাউন্টার, ২টি বিক্রয়কেন্দ্র আগুনে পোড়ানো হয়েছে।
কোন বিভাগে কয়টি আগুন: সবচেয়ে বেশি, ৩৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, আর ঢাকা শহরে ৮২টি। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪টি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি, বরিশাল বিভাগে ৬টি, রংপুর বিভাগে ৬টি, খুলনা বিভাগে ২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১টি অগ্নি নাশকতা ঘটেছে।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরে ১৫টি, চট্টগ্রামে ৮টি, নারায়ণগঞ্জ ৬টি, বগুড়া ৫টি, মানিকগঞ্জ ৪টি, ফরিদপুর ৪টি, লালমনিরহাট ৪টি করে ঘটনার খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাহজাহানপুরে অগ্নি নির্বাপণ করার সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।