সিডরের ১৬ বছর — নিখোঁজের সন্ধনে পথ চেয়ে আছে স্বজনরা

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরের’ আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়ে শত শত মানুষ, গবাদি পশু ও বন্যপ্রাণীর জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছিলো। নিখোঁজ হয়েছিলো বহু মানুষ। নিখোঁজ অনেক মানুষের ফিরে আসার অপেক্ষায় আজও প্রহর গুণছে তাদের স্বজনরা। সরকারি তথ্য অনুসারে ১৯৬০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্তমোট যে ৩৫টি বড় ঘূর্ণিঝড় উপকূলের উপর দিয়ে আঘাত হানে এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে অন্যতম সিডর। ঘুণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনপথ স্বাভাবিক হয়ে এলেও স্বজনহারা দুর্গত মানুষের মনের ক্ষত শুকায়নি আজও। বেঁচে থাকা মানুষগুলো প্রিয়জন হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছে না। উপকূলের মানুষের স্মৃতিতে এখনো ভেসে ওঠে শত শত মানুষের আত্মচিৎকার আর স্বজনদের আহাজারি। এখনো সন্তানহারা পিতা-মাতা, পিতা-মাতাহারা সন্তানরা এখনো পথের দিকে তাকিয়ে আছে, হয়তো বা তারা ফিরে আবার আসবে এই আশায়।
মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট বাংলাদেশের প্রধান সেই সময় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানির কথা বলেছিলেন। তবে সরকারিভাবে বলা হয়েছিল, প্রাণহানি হয়েছে ছয় হাজারের মতো। সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল। ধ্বংসযজ্ঞ চলে বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠিসহ দেশের প্রায় ৩১টি জেলায়। সিডর আক্রান্ত এলাকায় জায়গার অভাবে গণকবর দিতে হয়। অনেক লাশের কোনো পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। কাপড়ের অভাবে অনেক মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে দাফন করা হয়। ঘটনার এক মাস পরেও ধানখেত, নদীর চর, বেড়িবাঁধ, গাছের গোড়া আর জঙ্গলের নানা আনাচকানাচ থেকে লাশ, লাশের অংশবিশেষ অথবা কঙ্কাল উদ্ধার হয়। কেউ কেউ সিডর আঘাত হানার অনেক দিন পর স্বজনদের কাছে ফিরেও আসেন। স্মৃতি হারিয়ে অনেকেই আর গ্রামের বাড়ি খুঁজে পাননি। ফিরতে পারেননি।
এদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূল দিবস উদযাপন উপলক্ষে জলবায়ু সংকটে বিপর্যস্ত উপকূল সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে। গতকাল (১৪ নভেম্বর) সকালে শ্যামনগরের কাশিমাড়ি ইউনিয়নের ঝাঁপালী খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় কোস্টাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম(এসএসএসটি) ও উপকূলীয় শিক্ষা বৈচিত্র্য উন্নয়ন সংস্থা (সিডিও), সাংবাদিক এবং স্থানীয় জনগোষ্টীসমূহ এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে।
এসময় তারা উপকূল সুরক্ষায় যুব ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১০ দফা দাবি সমূহ তুলে ধরেন। দাবী সমূহের মধ্যে ১) ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। ২) টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পুর্ননির্মাণ করতে হবে। ৩) উপকূলীয় এলাকার জন্য সরকারি সেবায় সুপেয় পানি নিশ্চিত করা ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪) উপকূলবাসীর জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৫) উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। ৬) দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলকে দূর্যোগ প্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে হবে। ৭) জাতীয় বাজেট উপকূলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।৮) দূর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় সরকারকে জাতীয়ভাবে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। ৯) কৃষি জমি ও চিৎড়ি চাষের জন্য আলাদা-আলাদা অর্থনৈতিক জোন তৈরি করতে হবে। ১০) সরকারি ভাবে বৃক্ষরোপণ ও সুন্দরবন ও তার জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষায় কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতিনিযত বহুমুখী দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করেন। জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড় এবং লবনাক্ততাসহ বিভিন্ন ভয়াল দুর্যোগ নিয়ে দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করেন উপকূলের মানুষ। আগে আমাদের এলাকায় অনেক বছর পর পর দুর্যোগ হতো কিন্তু এখন প্রতিমাসে দুর্যোগের কবলে পড়ি। আমরা আর দুর্যোগ চাই না, জলবায়ুর সুবিচার চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ দায়ী নই, তবে আমাদের কেন বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে বিশ^ নেতাদের কাছে আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জলবায়ু তহবিল সুনিশ্চিত চাই। আমরা সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর নিকট থেকে জলবায়ু নায্যতার দাবীসমূহ আমাদের সরকারের মাধ্যমে বিশে^র ধনী দেশগুলোর কাছে পৌচ্ছে দিতে চাই।
প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ দিবসে স্বজনহারা মানুষরা মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাত, কোরআনখানি ও নানাবিধ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন

 

 

 

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।