ঘূর্ণিঝড় মিধিলি —– পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে আতঙ্কি উপকূল বাসি

আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে উপকূলীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মিধিলির প্রভাবে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অধিক উচ্চতায় বইছে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতায় মোট ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে জরাজীর্ণ ৩৫টি পয়েন্টে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ সকল বেড়িবাঁধ সংস্কার অনেক জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় এখানকার বাসিন্দাদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। একই অবস্থা উপকূলীয় অঞ্চলের ২০ জেলার কয়েক কোটি মানুষের মাঝে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে নভেম্বর মাসের ঝড়গুলোই বেশি ভয়ংকর ছিল। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় বাদে ছোট-বড় মিলিয়ে অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে হিসাব কষে দেখা গেছে নভেম্বর মাসে আঘাত হানা প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই জান-মালের বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। নভেম্বর মাসে সংঘঠিত ঘূর্ণিঝড়গুলোর বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ঘূর্ণিঝড় অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী হয়। এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে না পারলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়।
১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় গোর্কী ঝড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বরের ঝড়ে প্রায় আট হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আরেকটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সিডরে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ নিহত হন। জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ, ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রায় ৭০ হাজার বাড়িঘর, বিনষ্ট হয় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল। অক্টোবর-নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ভয়ংকর কেন হয় এর ব্যাখা দিতে গিয়ে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে সাগর বৈশ্বিক তাপমাত্রার কারণে বেশি উষ্ণ থাকে। আর এর ফলে সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে নিতে অপর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও অরক্ষিত রয়েছে বেড়িবাঁধ। এতে ক্ষতি হতে পারে সম্পদের। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলি গতি বাড়ছে। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলো বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাই মিধিলি শঙ্কিত করে তুলেছে গত কয়েক বছরের একাধিক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারা দেশের দক্ষিণ উপকূলের বাসিন্দাদেরও। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধগুলোর কারণে আবারও লোকালয়ে প্লাবনের শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলবাসী। বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি, খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা এবং বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলার অনেক বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় এখানকার বাসিন্দাদের শঙ্কা বেড়েছে।
উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, গতকাল থেকেই থেমে থেমে হালকা, মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারি বর্ষণে অসংখ্য ঘের পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, ৩ নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।