কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা হুমকি অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন মন্তব্য করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে তাকে হত্যার হুমকির বিষয়ে মিলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি। ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিদেশে আমাদের কূটনীতিকদের সেফটি ও সিকিউরিটি অবশ্যই আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। তাদের বিরুদ্ধে হুমকিকে আমরা অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিই।
মুশফিক তার কাছে জানতে চান যে, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের কাছ থেকে অব্যাহতভাবে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতারা একই সুরে কথা বলছেন। তারা রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করতে চান। এরই মধ্যে নিজের নিরাপত্তা এবং মৌলিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়টি কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়াসলি নিচ্ছেন, এবং সহিংস বক্তব্যকে? জবাবে ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে হুমকিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে বার বার আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছি। তাদেরকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেব যে, কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে মার্কিন কূটনৈতিক মিশন ও এর কর্মকর্তাদের সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে বাধ্যবাধকতা আছে তাদের।
আমরা আশা করবো তারা এসব বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
সাংবাদিক মুশফিক তার কাছে আরও জানতে চান, বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদ বিক্ষোভ, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঐক্যমতে আসার আহ্বানকে উপেক্ষা করে আগামী ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এটা প্রত্যাখ্যান করেছে। দমনপীড়ন অব্যাহত আছে। অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে এবং সরকারের জবাবদিহিতার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কি? এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আমাদের বার্তায় অবিচল আছি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও আমাদের বার্তা এখনও একই। বাংলাদেশি জনগণ যা চায়, আমরাও তাই চাই। তা হলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশে একক কোনো রাজনৈতিক দলকে আমরা সমর্থন করি না। আমরা এক দলকে বাদ দিয়ে অন্যদলকে সমর্থন করি না। সব দলের প্রতি সংযত থাকার, সহিংসতা পরিহারের এবং একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই, যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নকারী বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ উপেক্ষা করে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বানকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ‘সব রাজনৈতিক দল’ এ তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। দমন-পীড়ন অব্যাহত আছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবং বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?
রাজনৈতিক বিভেদের মধ্যেই ভোটের তফসিল
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তায় কোনো বদল আসেনি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরও যুক্তরাষ্ট্র একই বার্তা দিচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তা চায়। আর তা হলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান।