কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্যরা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আরও তিন কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করেছেন। গতকাল রোববার মধ্যরাতে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের একটি দল উখিয়ার একাধিক আশ্রয়শিবিরে এ অভিযান চালায়। এ সময় দেশীয় তিনটি অস্ত্র ও দুই কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার তিনজন হলেন আরসার স্লিপার সেল ও ওলামা বডির (কাউন্সিল) কমান্ডার মৌলভি হামিদ হোসেন ওরফে ডাক্তার হামিদ, আরসার অর্থ সমন্বয়ক ও ক্যাম্প কমান্ডার আবু তৈয়ব ওরফে সোনা মিয়া ও গোয়েন্দা সেলের কমান্ডার ওসমান গনি। এর মধ্যে উখিয়ার হাতিরডেবা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৭) অভিযান চালিয়ে মৌলভি হামিদ ও আবু তৈয়ব এবং মধুরছড়া আশ্রয়শিবির (ক্যাম্প-৪ বর্ধিত) থেকে ওসমান গণিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আরসার তিন কমান্ডারকে গ্রেপ্তারের কথা জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত সাড়ে ১১ মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্যরা আরসার সামরিক কমান্ডারসহ ৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। আশ্রয়শিবিরগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে আরসা এখন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপহরণ, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আরসা জড়িয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মৌলভি হামিদ হোসেন ২০১৭ সালে সপরিবার মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ই) বি-ব্লকে বসবাস শুরু করেন। এরপর পল্লিচিকিৎসকের পেশায় যুক্ত হন। এর সুবাদে তিনি আরসার প্রধান জিম্মাদারের দায়িত্ব পান। সম্প্রতি আশ্রয়শিবির থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আরসার ওলামা বডির (কাউন্সিল) প্রধান সালমান মুরব্বির অন্যতম সহযোগী ছিলেন মৌলভি হামিদ। সালমান গ্রেপ্তারের পর ওলামা বডি পরিচালনার দায়িত্ব পান হামিদ। হামিদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় স্লিপার সেল, যেখানে অপহৃত ব্যক্তিদের রাখা হয়। হামিদের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি আরসাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৬০ জন নতুন রোহিঙ্গা সদস্যকে। আরসার তহবিলে চলে সদস্যদের বেতন ও তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণ।
গ্রেপ্তার আবু তৈয়ব আরসাতে যোগ দেন ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের সঙ্গে তিনিও বাংলাদেশে এসে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে বসতি শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে ক্যাম্প–৫, ৬ ও ৭–এর কমান্ডার ও অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আরসার দোকান আছে ৩৮টি। দোকানের ভাড়া ও ক্যাম্পের বিভিন্ন বাজারের ২৫০-৩০০টি দোকান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করতেন আবু তৈয়ব।
ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী ওসমান গণি আরসার গোয়েন্দা সেলের কমান্ডার জানিয়ে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, আশ্রয়শিবিরের শরণার্থীসেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এনজিও এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে আরসার শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করতেন ওসমান গণি। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি ও খবরাখবর পৌঁছাতেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখতেন। কোনো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে তিনি মেসেজ দিয়ে গ্রুপ সদস্যদের সতর্ক করতেন। আরসার তথ্যপ্রযুক্তি সেলের দেখভালের দায়িত্বেও ছিলেন ওসমান গণি।
আবু সালাম চৌধুরী আরও বলেন, আরসার তিন কমান্ডারকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে।