বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নমিনেশন দেওয়ার নামে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম একতরফা ও অবৈধ কার্যক্রম। মনোনয়নের নামে লুটের টাকায় সংসদীয় আসন বরাদ্দের মহোৎসব চলছে। অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভিড় নমিনেশনের নামে সেলিব্রেটি দেখার ভিড়। মাল ছাড়ো কাম করো-এটা হলো আওয়ামী লীগ। এই হলো নির্বাচন। রোববার ভার্চুয়ালে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সমাবেশে মান্না এসব কথা বলেন। এদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮ সংসদীয় আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে ৯০ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠককে বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, শনিবার বাংলাদেশের পরাষ্ট্র সচিব দিল্লিতে ৯০টি দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে কি সেই সব দেশের দূতাবাসগুলো নেই? দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করতে হলো কেন? ভারতই কেন বা আয়োজন করে দিল? ভারত যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে থাকে তাহলে তো তাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে থাকার কথা ছিল। আজকে তো ইউরোপ-আমেরিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে সোচ্চার। যে সরকারের একদলীয় দুঃশাসনে দেশের সাধারণ মানুষ সবাই পিষ্ট, সেই সরকারের পক্ষে কাজ করানোর জন্য দিল্লিতে ৯০টি দেশের কূটনৈতিকদের বৈঠক আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এক দুর্বিষহ দুর্বৃত্তদের কাছে আটকে আছে দেশের জনগণ। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী যা ইচ্ছে তাই করছেন। দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও অবৈধ প্রধানমন্ত্রী থেমে নেই। তার সাজিয়ে তোলা প্রশাসন ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে একাত্তরের সেই ভয়ালরাত্রির পরিস্থিতি বর্তমান বাংলাদেশে তৈরি করেছেন। বর্তমান প্রজন্ম একাত্তরের সেই ভয়ালরাত্রি দেখেনি, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তারা বুঝতে পারছে তখন কি হয়েছিল। একাত্তরের মতো গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখিয়ে দিচ্ছে কোনটা বিএনপির বাড়ি। বিএনপি নেতাকর্মী কোথায় বসবাস করে, তাদের পরিবার কোথায় বসবাস করে। ঠিক একাত্তর সালে একই ঘটনা ঘটিয়েছে শান্তি কমিটি আলবদর, তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে দেখিয়ে দিয়েছে এই বাড়ির মানুষ স্বাধীনতাকামী। একাত্তরের যেন পুনরাবৃত্তি হয়েছে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের মধ্যে।’
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগুন সন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়া হবে না। ছাড় তো ইতোমধ্যে আপনি দিয়েছেন আসল অপরাধীকে। এখন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরবেন, নির্যাতন করে অন্য নেতাদের নাম বলাবেন। গত ১৫ বছর ধরে এই কাজগুলোই তো করেছে প্রধানমন্ত্রীর সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন, তিনি যা বলেন অবলীলায় দেশের জনগণ তা বিশ্বাস করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীরা যা বলেন মানুষ তার উলটোটা ভাবেন। দেশের জনগণ মনে করেন প্রধানমন্ত্রীসহ তার মন্ত্রীরা অনর্গল মিথ্যা কথা বলে যান।’
এদিকে প্রায় এক মাস পর রাজপথে ফিরলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সরকার পতনের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধীদের ডাকা অবরোধের সমর্থনে রোববার দুপুরে রাজধানীতে গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিলে মান্না অংশ নেন। মিছিল শেষে সমাবেশে মান্না বলেন, তারা দালাল নন, রাজনীতির কিং।
মান্না বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আমি একটু অসুস্থ ছিলাম। এখনো আমি পুরো সুস্থ নই। সমাবেশে আসব, এ রকম সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি আসতে বাধ্য করল। পুরো এক মাস গণতন্ত্র মঞ্চ লাগাতার লড়াই করছে। মিটিং-মিছিলে বিরতি নেয়নি। নাগরিক ঐক্য এই আন্দোলনে আছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ কেউ গণমাধ্যমে লিখলেন, মাহমুদুর রহমান কোথায়? হঠাৎ করে আমার জন্য এত দরদ!’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব অসুস্থ বলে উল্লেখ করেন মান্না। তিনি বলেন, আ স ম আব্দুর রব দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গেছেন। তার বিরুদ্ধেও লেখা হয়েছে যে তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে চান।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না দালাল নন। নির্বাচন কি হচ্ছে? বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মান্না। তিনি বলেন, চিল যেমন মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায়, সে রকম এখন টপাটপ বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিচার করছে রাত-দিন মিলে। কারও নামে ২ বছর, কারও নামে আড়াই বছর, কারও নামে ৩ বছর সাজার রায় দিয়ে দিচ্ছে। মামলা চালুই হয়নি, সাজা নির্ধারিত।