সাতক্ষীরার হাতে বুনন পাটজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা |

সাতক্ষীরায় ঋশিল্পীর তত্ত¡াবধানে হাতে বুনন পাটজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বছরে ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয় ইটালী, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, ফ্রান্স স্পেন, ফিনল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। এসব পাটজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে মেন্ডেলা ওয়ালম্যাট, ফ্লোরম্যাট, এ্যালেসব্যাগ, মার্সিব্যাগ, আমরিব্যাগ ও এ্যামনব্যাগ ইত্যাদী। ন্যদিকে জেলার কয়েক হাজার নারীও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে পাট সুতার ব্যাগ, ফ্লরম্যাট এবং ওয়ালম্যাটসহ বিভিন্ন রকম রপ্তানিজাত পাটজাতীয় পণ্য উৎপাদন করে। এসব নারী সংসারের পাশাপাশি হস্তশিল্পের কাজ করে মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার গৃহবধূ ফরিদা পারভীন জানান, দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্বামীসহ ৫ সদস্যের সংসার তার। স্বামী আব্দুর রাজ্জাক একজন ফুটপাতের চা বিক্রেতা। সারাদিন চা বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্ট হয়ে যায়। তাই ২০১৬ সালের দিকে এলাকার এক নারীর পরামর্শে ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল-এর অধীনে হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর পর থেকে পাটের সুতা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্যাগ বুনে প্রতি মাসে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, পাটজাত পণ্য তৈরির সব উপকরণ সরবরাহ করে ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল। এরপর প্রতিষ্ঠানটির চাহিদা মাফিক বিভিন্ন ব্যাগ এবং ওয়ালম্যাট বা ফ্লরম্যাট তৈরি করে দেন তারা। এসব ব্যাগ বুনে ঋশিল্পীতে সাপ্লাই দিয়ে তার সংসারে এখন স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে জানান তিনি।
একই এলাকার গৃহবধূ তেরেজা মন্ডল বলেন, স্বামী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। সংসার নির্বাহ করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। ঋশিল্পীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাটের পণ্য তৈরি করে স্বামীর চিকিৎসার পাশাপাশি সংসারও চালাচ্ছি। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে চার সদস্যের চলছে একমাত্র হস্তশিল্পের কাজ করে। তিনি বলেন, একেকটি পাটের ব্যাগ বুনলে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তাছাড়া ফ্লোরম্যাট এবং ওয়ালম্যাট তৈরি করলে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পাওয়া যায়। তেরেজা ও ফরিদার মত অন্তত সাতক্ষীরাতে ৭ হাজারের অধিক নারী পাটজাত পণ্য তৈরি করে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বিনেরপোতাস্থ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল এর সুলতানপুর অফিসের প্রোডাক্ট ম্যানেজার সঞ্জয় সরকার জানান, জেলার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার অস্বচ্ছল নারীকে হ্যান্ডিক্রাপ্ট বা হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে মূলতঃ পাটজাত পণ্য তৈরি করে নিয়ে তা বিদেশে রপ্তানি করে থাকে তার প্রতিষ্ঠানটি। পাট দড়ি বা সুতায় বুনা এসব পণ্য ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে মেন্ডেলা ওয়ালম্যাট, ফ্লোরম্যাট, এ্যালেসব্যাগ, মার্সিব্যাগ, আমরিব্যাগ ও এ্যামনব্যাগ উলে­খযোগ্য। অন্যদিকে এসব পণ্য তৈরি করে একেকজন মজুরি হিসেবে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন। তিনি বলেন, এসব নারীদের কাছে পাটের সুতা বা দড়ি এবং রংসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে রপ্তানি চাহিদা মাফিক পাটজাত পণ্য তৈরি করে নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরে গড়ে ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার পাটজাতীয় ব্যাগ এবং ওয়ালম্যাট সাতক্ষীরার ঋশিল্পী রপ্তানি করা হয়ে থাকে। চাহিদা আরো বেশি বলে জানান তিনি। তবে করোনাকালিন সময়ে চাহিদা কিছু কমে গেলেও বর্তমানে রপ্তানি বেড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক আশিষ কুমার জানান, জেনেছি ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত পাটজাত পণ্য রপ্তানি করছে। তবে দেশের অভ্যন্তরেও এখন পাটজাত পণ্য ব্যবহারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ এটি পরিবেশ সম্মত। সরকার পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পর থেকে পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, এ জেলার নারীদের হাতে তৈরি পাটজাত পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটি যেমন সাতক্ষীরার জন্য সুনাম বয়ে আনবে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, এ জেলার চিংড়ি, আম, মধুসহ আরো অন্যান্য কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

Please follow and like us:

Check Also

কারফিউর সময় ঢাকার রাস্তায় ‘ইউএন’ লেখা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমনের জন্য কারফিউ জারির পর ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল দেবার সময় ইউএন (ইউনাইটেড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।