রফিকুল ইসলাম, যশোর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন একই দলের ১৬ নেতা। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত জেলার ওই আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা তা প্রত্যাহার না করেন, তাহলে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন আওয়ামী লীগ নেতারাই।
যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে ৪৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৬। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা।
যশোর-১ (শার্শা) আসন থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম, সোহরাব হোসেন ও নাজমুল হাসান। আরও জমা দিয়েছেন জাকের পার্টির সবুর খান ও জাতীয় পার্টির আক্তারুজ্জামান।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, যিনি এ আসনে একেবারেই নতুন মুখ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান। আরও জমা দিয়েছেন জাকের পার্টির সাফরুজ্জামান ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবদুল আওয়াল।
যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন টানা দুবারের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আরও জমা দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মারুফ হাসান কাজল, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দলোনের মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান, জাকের পার্টির মাহবুব আলম, তৃণমূল বিএনপির কামরুজ্জামান, জাকের পার্টির মহিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শেখ নুরুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাড. সুমন কুমার রায়।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল। নৌকাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের রণজিৎ কুমার রায় ও সন্তোষ কুমার অধিকারী। এ ছাড়া জমা দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির অব. লে. ক. এম শাব্বির আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুকৃতি কুমার মণ্ডল, ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ইউনুস আলী, জাকের পার্টির লিটন মোল্লা ও জাতীয় পার্টির জহুরুল হক।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ইয়াকুব আলী, কামরুল হাসান বারী, হুমায়ুন সুলতান ও আমজাদ হোসেন লাভলু। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা, ইসলামী ঐক্যজোটের হাফেজ মাওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসী, জাকের পার্টির হাবিবুর রহমান এবং জাতীয় পার্টির এমএ হালিম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম, আজিজুল ইসলাম ও এইচএম আমির হোসেন। আরও দিয়েছেন জাতীয় পার্টির জিএম হাসান ও জাকের পার্টির সাইদুজ্জামান।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেছেন, আওয়ামী লীগ তথা নৌকার বিপক্ষে ছোট রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। যে কারণে ভোটারের উপস্থিতি আশানুরূপ নাও হতে পারে। সেজন্য দলীয় প্রধানের ইঙ্গিত পেয়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি এবং নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে আমাদের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে চূড়ান্তভাবে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা সে মোতাবেক কাজ করবে।