সাতক্ষীরার নারীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরণের পন্য সামগ্রী বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এসব পন্য তৈরি করা হয় খড় ও খেজুর পাতা দিয়ে। ইউরোপ আমেরিকার সাতটি দেশে রফতানি সামগ্রীর চাহিদাও বাড়ছে। সরেজমিনে জানা যায়, সাতক্ষীরার গোপিনাথপুর গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি খড় আর খেজুর পাতার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী রফতানি হচ্ছে ইতালি, স্পেন, সুইডেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও কানাডায়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রাউন্ড বাস্কেট, শ্রাবণী ঢাকনা বাস্কেট, স্কয়ার বাস্কেট, মিনি বাস্কেট, বালতি, সোর্ড, ওয়েস্ট বাস্কেট, শপিং বাস্কেট, মিরা, ডালি, রাউন্ড ম্যাট ও টেবিল ম্যাট ।
সাতক্ষীরার একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব সামগ্রী নারীর কাছ থেকে প্রায় দুই দশক ধরে সংগ্রহ করে তা ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। এতে জেলার অন্তত ৭০০-৮০০ নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উপকৃত হয়েছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামে বসবাসকারী প্রায় ৫০ শতাংশ নারী সংসারের কাজের পাশাপাশি খড় আর খেজুর পাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পণ্য সামগ্রী তৈরি করে থাকেন। এধরনের হস্তশিল্পের সাথে জড়িত থাকা গৃহবধূ সন্ধ্যা রানী সরকার, মিনতি রানী , রিক্তা, বিশাখা রানীসহ অনেকেই জানান, দেড় যুগের অধিক সময় ধরে খড় এবং খেজুর পাতা দিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী তৈরি করেন। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি তারা এই কাজ করে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা উপার্জন করেন। উৎপাদিত এসব পণ্য সামগ্রী সাতক্ষীরার একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন তারা।
সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় অবস্থিত ঋ-শিল্পী ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুন্সি খায়রুল ইসলাম জানান, খড় ও খেজুর পাতার তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী প্রায় দুই দশক ধরে রফতানি করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। সাতক্ষীরার নারীদের হাতে তৈরি এসব পণ্যের জার্মানি, ইতালি, স্পেন, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আমেরিকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বছরে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পণ্য রফতানি করা হয় এসব দেশে।
সাতক্ষীরা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ, কে, এম শফিউল আযম বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের সাবলম্বী করে তুলতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেকারনে বেসরকারিভাবে অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এসব নারীরা হস্তশিল্পের কাজ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার গোপিনাথপুরের নারীদের হাতে তৈরি খড় ও খেজুর পাতার বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী বিদেশে রফতানি হওয়ায় তা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এটি একটি খুবই ভালো দিক।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলায় নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে। এখানে হস্তশিল্পের অনেক মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছেন নারীরা। সরকারের পক্ষ থেকেও নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, খড় ও খেজুর পাতা দিয়ে তৈরি পন্য সামগ্রীর পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা থেকে চিংড়ি, কাঁকড়া, মধু, আম, মাটির টালিসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী রফতানি হয়ে থাকে, ‹যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।’