দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ বাংলাদেশ এবং গণতন্ত্রের বিষয়ে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাসে অবমূল্যায়িত

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দোষী বলে প্রমাণিত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু করে। যদিও এই নিষেধাজ্ঞাগুলো বিরোধী দলের সদস্য থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা পরিষেবাগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, তবুও শাসক দল নিজেকে এর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখছে। ইতিমধ্যে, বিরোধীরা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচনের তদারকি করার জন্য একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে জোরদার করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ (এএল) টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতাসীন হতে আগ্রহী, তারা লৌহকঠিন দৃঢ়তা বজায় রাখতে বিরোধীদের প্রতি দমন-পীড়ন ইদানীং আরো বাড়িয়েছে।

   শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি রসিকতা ছিল। তিনি বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হন তাহলে তিনিও বিরোধীদের সাথে (অসুস্থ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব বোঝাতে বাইডেনকে কটূক্তি করার পাশাপাশি, শেখ হাসিনা এর আগে স্পষ্টভাবে জোর দিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় শাসন পরিবর্তন করতে চাইছে। প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন প্রশাসন ২০২১ এবং ২০২৩ সালের দুটি “গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলন” থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে, এমনকি সেখানে তারা পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল (পাকিস্তান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও ফ্রিডম হাউস সহ বিভিন্ন গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে নীচের অবস্থানে রয়েছে)। আওয়ামী লীগের প্রতি ঝোঁক দেখে নয়াদিল্লির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন, বিশেষ করে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় থেকে। যদিও ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার শেখ হাসিনার ওপর নরম মনোভাব দেখাচ্ছে, একই সাথে ওয়াশিংটনকে তারা বলেছে যে ঢাকাকে খুব বেশি চাপ দেওয়া উচিত নয়, কারণ নির্বাচন বাংলাদেশের “ঘরোয়া বিষয়”। পঞ্চম ভারত-মার্কিন ২+২ মিটিংয়ে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে ভারত।

অভিযোগের ধারাবাহিকতা, প্রয়োগে অসংগতি

বাংলাদেশে নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া একইরকম রয়েছে।

তবে, ওয়াশিংটন এবার যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছে তা ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে, বিএনপির বয়কটের কারণে বেশিরভাগ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল আওয়ামী লীগ। ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৩২ টি আসন পেয়ে একটি দুর্দান্ত বিজয় লাভ করে তারা। ৬ জানুয়ারি, ২০১৪-এর নির্বাচনের পরপরই, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট খোলাখুলিভাবে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিল, এই বলে যে “সাম্প্রতিক সংসদীয় নির্বাচন দেখে তারা হতাশ।’ যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে “সকল নাগরিককে স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দেবার আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৪ সালে, ঠিক এখনকার মতো, শেখ হাসিনা বিএনপির সাথে সমস্ত আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যাইহোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে সময় দৃঢ়ভাবে বলেছিল যে তারা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ সত্ত্বেও শেখ হাসিনা সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে যাবে। একইভাবে, ২০১৮ সালে যখন আরেকটি সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ৯০ শতাংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরিয়ে দেয়, তখন নির্বাচনের দিনের অনিয়ম, ভোটারদের ভয়ভীতি, হয়রানি ইত্যাদি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্টভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। যদিও ইতিবাচক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র তখন বাংলাদেশকে কোনো বাধা দেয়নি।

 

প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই শক্তিশালী হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী, তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বৃহত্তম বাজার এবং বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। এশিয়ায় USAID-এর বৃহত্তম কর্মসূচি বাংলাদেশে, যা “গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শাসন” এর উপর জোর দেয়। উভয় দেশ ২০২২ সালের শেষের দিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০বছর উদ্‌যাপন করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলোতে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার সময়ও যথেষ্ট খেয়াল রাখা হয়েছে। ৯ নভেম্বর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করার সময়েও, স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে যে ”মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য, জলবায়ু, নিরাপত্তা সহযোগিতা সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এবং অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে চাইছে।”

মূলত, এক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক (ভারতের সাথে হাসিনার সম্পর্কের সমান্তরাল উত্থানের সাথে) ঢাকাকে দেখিয়েছে যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রয়োগ ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকারের মধ্যে ছিল। সম্পর্কের এই উন্নতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে ঢাকার স্বাচ্ছন্দ্যকে বাড়িয়ে তুললেও, মার্কিন নীতির অন্যান্য দিকগুলি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমত, অন্যান্য নিয়ম প্রয়োগের অগ্রাধিকারের বিপরীতে সন্ত্রাস দমন ব্যবস্থার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোকাসে অসংগতি রয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের মধ্যেও। ২০২১  সালের ডিসেম্বরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এটি একটি অভিজাত আধাসামরিক কাউন্টার-টেরর ফোর্স যেটি প্রায়শই রাস্তার বিক্ষোভকে দমন করতে আওয়ামী লীগের ‘শক ট্রুপস’ হিসাবে কাজ করে। রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর র‌্যাবের নির্মম হয়রানি, পাশাপাশি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন র‌্যাবকে ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নিয়ে আসে।

একটি স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে (২০০৪ সালে বিএনপির খালেদা জিয়ার অধীনে) ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাবকে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক ছিল। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সালে বাহিনীকে আরও স্বচ্ছ হতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল, স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা সহযোগিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে র‌্যাবের নেতৃত্বের সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১০সালে বৃটিশ কর্মকর্তারা ইউকে এবং ইউএস উভয়েরই র‌্যাব-কে প্রশিক্ষণ দেওয়া সংক্রান্ত উইকিলিকস রিপোর্ট নিশ্চিত করেছেন – আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ ছিল এই প্রশিক্ষণ। তখনও, র‌্যাব একটি “ডেথ স্কোয়াড” হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর অপ্রতিরোধ্য মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে আলোড়ন তুলতে ইচ্ছুক ছিল যখন বিশ্বজুড়ে তার নিজস্ব সন্ত্রাসবিরোধী ফোকাস ছিল বেশি।

দ্বিতীয়ত: দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে একটি বিষয় আছে – পাকিস্তানে ধারাবাহিক সামরিক শাসনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জুগিয়ে এসেছে, কারণ এটি হান্টিংটোনীয় বিশ্বাসকে মান্যতা দিয়ে এসেছে যে- গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের চেয়ে সামরিক শাসন তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে ভেঙে যাওয়ার চেয়ে বেশি স্থিতিশীলতা প্রদান করে। পাকিস্তানের দুটি সামরিক শাসন আমেরিকান সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যকে (আফগান জিহাদে জিয়া-উল-হক; সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ওয়ারে পারভেজ মোশারফ) প্রত্যক্ষভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা জুগিয়েছে। এমনকি ২০১৫ সালে, পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার স্পষ্টভাবে জোর দিয়েছিলেন যে মার্কিন সরকার পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সাথে মোকাবিলা করতে পছন্দ করে।

অতি সম্প্রতি, স্টেট ডিপার্টমেন্ট পুনর্ব্যক্ত করেছে যে এটি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই গণতন্ত্রের পক্ষে। যাইহোক, সুষ্ঠু নির্বাচনী অনুশীলন সম্পর্কিত ওয়াশিংটনের বিবৃতিগুলো পাকিস্তানের জন্য সাধারণ হলেও- বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে ওয়াশিংটন যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে পাকিস্তানে গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। অন্যান্য আইনপ্রণেতারাও একইভাবে পাকিস্তানকে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার না করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না করা পর্যন্ত মার্কিন সহায়তা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তদুপরি বাংলাদেশেও, এর  প্রথম সামরিক শাসক এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া-উর-রহমানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনে একটি নরম জায়গা ছিল বলে জানা যায়, যেমনটি বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন। সামরিক শাসনের প্রতি সমর্থনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে যে “স্থিতিশীল কর্তৃত্ববাদ’- কে উৎসাহিত করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির জন্য আলাদা উদাহরণ তৈরি করেছে। এটা বলা অযৌক্তিক হবে না যে পাকিস্তানের প্রতি ওয়াশিংটনের পার্থক্যমূলক আচরণের (বাংলাদেশ এক সময় যার অংশ ছিল) পাশাপাশি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক লাভের মঞ্চে”গণতন্ত্রের প্রচার” বলি দেওয়ার ইচ্ছা হাসিনাকে গত এক দশকে মার্কিন চাপ প্রতিরোধে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতির প্রভাব কী?

ওয়াশিংটনের প্রধান সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোর র মধ্যে একটি হলো- রাষ্ট্রগুলিকে বেইজিংয়ের রাজনৈতিক প্রভাবের বৃত্তের বাইরে রেখে বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব রোধ করা, এমনকি সেই দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে  চীনের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে আবদ্ধ থাকলেও। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র প্রচারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োগ ঢাকাকে চীনের কাছাকাছি আসার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে -এটি ওয়াশিংটনের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও, বেইজিংয়ের সাথে জড়িত থাকার ক্ষেত্রে ঢাকার নিজস্ব কারণ রয়েছে। চীন তার আবেদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব, বেইজিং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির প্রতি সমর্থনের সুযোগ হাতছাড়া করেনি।এটি চীনকে বাংলাদেশের জন্য আরও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করার একটি উপযুক্ত সুযোগ  প্রদান করে। ভারত, তার প্রতিবেশী চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তার কথা মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার বাংলাদেশ নীতির বিষয়ে সতর্ক করার সময় এই উদ্বেগের বিষয়টিও উত্থাপন করেছে। তাছাড়া, এমন এক সময়ে যখন  ইন্দো-প্যাসিফিকের সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সাথে স্বার্থের ভিন্নতা নয়া দিল্লির জন্য শুভ নয়। ইতোমধ্যেই, ভারত দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে শান্ত করার জন্য একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।

এই বছরের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এসেছে। “উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক” শব্দবন্ধ যা বেশিরভাগ পশ্চিমা  ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য, ঢাকার দৃষ্টিভঙ্গিতে এর কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। বরং, বাংলাদেশ শেখ মুজিবুর রহমানের “সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়” এই কথাটিকে “পথনির্দেশক নীতি” হিসাবে ব্যবহার  করে চলেছে। বাংলাদেশি জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই তার ভূমিকা পালন করা উচিত, যার মধ্যে প্রধান  হল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ – ওয়াশিংটনের প্রতি হাসিনার সম্মতির ইঙ্গিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলটি বেশ পুরোনো: গণতন্ত্রের প্রচার বনাম ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সত্যিটা হলো যে ওয়াশিংটন তার নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের উপর নির্ভর করে তার নিজের নীতির সাথেই আপস করে চলেছে, তার নিজস্ব কর্তৃত্বকে হ্রাস করে চলেছে। সত্যিকারের নব্য-উইলসোনিয়ান চেতনায়, অথবা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে যখন ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে পুরানো এবং নতুন উভয় ফল্ট-লাইন একটি মহান শক্তি হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে “অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের” উপর ফোকাস করতে হবে।

Please follow and like us:

Check Also

২৫ মে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর প্রভাবে ২৪ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের বেশির ভাগ জেলায় বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।