আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সাতক্ষীরাসহ উপকুলীয় জেলা সমূহে মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি তথ্য মতে বাংলাদেশের আবাদি জমির শতকরা ১০ ভাগের বেশি দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায়। উপকূলবর্তী এলাকার ২৮.৬০ লাখ হেক্টরের মধ্যে ১০.৫৬ লাখ হেক্টর আবাদি জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা দ্বারা আক্রান্ত। দিনের পর দিন আক্রান্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৩ সালে উপকূলীয় জেলাগুলোতে লবনাক্ত জমির পরিমান ছিলো ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর এখন তা ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে হালকা লবনাক্ততা জমির পরিমান ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর, মধ্যম মাত্রায় লবনাক্ত জমির পরিমান ২ লাখ ৫০ হাজার, তীব্র মাত্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার এবং খুব তীব্র মাত্রায় লবনাক্ত জমির পরিমান ২ লাখ হেক্টর। লবণাক্ততার কারণে আবাদি জমি যেমন অনাবাদি হচ্ছে তেমনি উপকূলে অর্থনৈতিক ক্ষত বাড়ছে। উপকূলীয় জেলাতে খাদ্য শস্য উৎপাদন বঞ্চিত হচ্ছে ৩০ লাখ টনের বেশি। এতে কৃষি উৎপাদন কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিউটের আয়োজনে গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি রেব হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে এ সময় নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। বক্তরা লবণাক্ততা রোধে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগীতা কামনা করেন।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরা জেলায় এর প্রভাবে এক লক্ষ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমি লবনাক্তায় রূপ নিয়েছে। আর ৪৬ হাজার ২৬ হেক্টর জমিতে কোন ফসলই হচ্ছে না। এছাড়া স্থায়ী পতিত জমি রয়েছে ৪৫ হাজার ১১০ হেক্টর। ফলে জেলার প্রায় ২৬ ভাগ ভুমিতে কৃষি কাজ করা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন কৃষি জমি হ্রাসের ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু সাতক্ষীরা জেলাতে ৬৭ হাজার ২৩০টি পরিবার ভুমিহীন হয়েছে। এছাড়া প্রান্তিক চাষি পরিবারের সংখ্যা এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি পরিবার। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র এমন তথ্য জানায়। একই অবস্থা উপকূলীয় জেলা সমূহে। অনেকে জমির উপরিভাগ থেকে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগ ও মৎস্য সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলাতে মোট ভূমির পরিমাণ ৩৮১৭.৩০ বর্গ কিলোমিটার। হেক্টরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৭৩। এর মধ্যে জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে চলতি বছরে জেলাতে ৪৬ হাজার ২৬ হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। আর স্থায়ী পতিত জমি রয়েছে ৪৫ হাজার ১১০ হেক্টর। সাময়িক পতিত জমি আছে, ৯১৬ হেক্টর,জলাশয় রয়েছে ৬২,৪৯৪ হেক্টর,আবাস ভুমি ও অবকাঠামো ও স্থাপনা রয়েছে ১,৪১,৪২২ হেক্টর। সবমিলে জেলাতে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১৪ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। অন্যদিকে জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব মতে চলতি বছরে জেলাতে লবানক্ত জমির পরিমান দাড়িয়েছে এক লক্ষ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর। ফলে জেলাতে মোট ভূমির ২৫ দশমিক ৯০ ভাগ জমিতে কৃষি কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, কৃষি জমিতে জোর করে লবন প্রবেশ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাধ পুন:নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকটি পোল্ডারে করা গেলে স্থায়ীভাবে লবণাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাহলে জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি লবনাক্ত সহিষ্ণু শস্য আবাদের উদ্যোগ নেওয়া গেলে স্থানীয় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে। গাবুরা অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় কিনা সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। এছাড়া চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে আরো প্রযুক্তি সহায়তা বাড়ানো দরকার। নিরাপদ ও উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে ভেনামি চিংড়ির চাষ প্রচলন করা যেতে পারে।