॥ সাইদুর রহমান রুমী॥
দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ যখন দিশেহারা। বেকারত্বের চরম হতাশায় যখন দেশের লাখ লাখ তরুণ ঘরছাড়া। চরম দারিদ্র্যে যখন পরিবারগুলো পুষ্টিছাড়া। তখনো সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে চলেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি ২শ’-৩শ’ গুণ পর্যন্ত সম্পদ বাড়ানোর হলফনামা দিয়েছেন। যদিও নির্বাচনকেন্দ্রিক জমা দেয়া হলফনামায় অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতার প্রকৃত সম্পদের মূল্য কম দেখানোর অভিযোগ রয়েছে আর তাদের স্ত্রীরা কোনো কাজ না করেও শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এ সময়ে। মনে হচ্ছে যেন পরবর্তী সংসদ শত কোটিপতির ক্লাবে রূপ লাভ করবে। বিগত দশকসমূহে সংসদে শিল্পপতিদের আগ্রাসন প্রক্রিয়া বলা হতো। কোটিপতি ক্লাব বর্তমান সরকারের চমকে দেয়ার মতো উন্নয়নে যেন সংসদ সদস্যদের উপাধি কোটি থেকে শত কোটিপতি ক্লাব হবে মনে হয়।
বিশ্লেষকরা জানান, এ যেন রূপকথার গল্পের আলাদিনের চেরাগের কাহিনীকেও হার মানায়। ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রী-এমপিরা কেমন করে শত শত কোটি টাকার অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, তা নিয়ে নানা মুখরোচক কাহিনী তৈরি হয়েছে। রাজধানীর পূর্বাচলসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় থাকা তাদের প্লট এবং ফ্ল্যাটের মূল্য অস্বাভাবিক কম দেখানো হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণ
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পেশা ছিল লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। ১৫ বছর পর সেই পেশা পরিবর্তন করে এখন তিনি বেসরকারি চাকরিজীবী। এ সময়ে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণেরও বেশি। এছাড়া তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে ২ গুণের বেশি। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী বিনিয়োগও বেড়েছে তাদের। নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২২ টাকা। ১৫ বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি হয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৮ এবং তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য দাখিল করা হলফনামায় তিনি এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
এক দশকে ১৭ গুণ নগদ টাকা বেড়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নগদ টাকা বেড়েছে। গত এক দশকে তার নিজের নগদ টাকা বেড়েছে ১৭ গুণ। আর একই সময়ে স্ত্রীর নগদ টাকা বেড়েছে ১৬ গুণ। নাছিমের নগদ টাকা ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে এখন ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হয়েছে। আর স্ত্রীর নগদ টাকা ১৮ লাখ ৯৬ হাজার থেকে বেড়ে তিন কোটি চার লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য বাহাউদ্দিন নাছিমের দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে নৌকার তার্থী হয়েছেন নাছিম। সম্পদের বিবরণীতে নাছিম জানিয়েছেন, স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে তার জমা আছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগে এটি ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে আমানত হিসেবে জমা ছিল ৩১ হাজার ২১৫ টাকা। এখন জমা আছে দেড় কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে নাছিমের বিনিয়োগ আছে ১১ কোটি টাকার বেশি। ১০ বছর আগে এ খাতে তার বিনিয়োগ ছিল ৭ কোটি ৩২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নগদ টাকা বেড়েছে ২১৮ গুণ
১০ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার কাছে মাত্র ৫ লাখ টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি এখন উল্লেখ করেছেন, তার কাছে বর্তমানে নগদ আছে ১০ কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৯ টাকা, যা ১০ বছর আগের তুলনায় ২১৮ গুণ বেশি। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণও ১০ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৭ টাকা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে জানা যায়, আনিসুল হকের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার হিসেবে তিনি সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম বাংলাদেশের শেয়ার মূল্য উল্লেখ করেছেন ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে কৃষি খাত (মৎস্য) থেকে আনিসুল হকের বার্ষিক কোনো আয় ছিল না। তবে গত পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এ খাতে তার বার্ষিক আয় ৩ কোটি টাকার বেশি দেখিয়েছিলেন। চলতি বছর এ খাতে আয় দেখিয়েছেন ৪৩ লাখ টাকা। তার আয়ের বড় অংশ আসে ব্যাংক ও এফডিআর-এর সুদ এবং কৃষি ও মৎস্য খাত থেকে। রাজধানীর পূর্বাচলে তার একটি প্লট রয়েছে, যার মূল্য মাত্র ২৫ লাখ ৫১ হাজার ৮৫৮ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া বনানীতে একটি বাড়ি, যার মূল্য ৪৫ লাখ টাকা এবং দুটি ফ্ল্যাট যার মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
শূন্য থেকে কোটিপতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় দীপু মনি উল্লেখ করেছিলেন, তার অন্য কোনো আয় বা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নেই, শুধুমাত্র আইন পেশা থেকে বছরে মাত্র ৩ লাখ টাকা আয় করেন। চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু ২০১৮ পর্যন্ত পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তিনবারেই তার অর্থ-সম্পদের পরিমাণ পাল্টে গেছে। আসন্ন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, তার অন্য কোনো আয় বা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নেই, শুধুমাত্র আইন পেশা থেকে বছরে মাত্র ৩ লাখ টাকা আয় করেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে সম্প্রতি জমা দেওয়া হলফনামায় দীপু মনি উল্লেখ করেছেন, তার নিজের ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
শাজাহান খানের আয় বেড়ে ৩২ গুণ
মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও তার স্ত্রীর সম্পদ ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শাজাহান খানের আয় বেড়ে এখন ৩২ গুণ। ২০০৮ ও ২০২৩ সালে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে শাজাহান খানের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এবার তিনি আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ তার আয় বেড়ে প্রায় ৩২ গুণ হয়েছে।
মির্জা আজমের সম্পদ বেড়েছে ১২২ গুণ, স্ত্রীর ৭৯ গুণ
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের সম্পদ গত ১৫ বছরে বেড়েছে ১২২ গুণ এবং স্ত্রীর ৭৯ গুণ। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্যের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৮২ গুণ। ১৫ বছরের ব্যবধানে মির্জা আজমের বার্ষিক আয় সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে পৌনে চার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। গত মাত্র পাঁচ বছরেই তার সম্পদ বেড়েছে পৌনে ২৬ কোটি টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র চার লাখ ৪৮ হাজার ১৮৫ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ সময় তার বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ দুই হাজার ৫৭ টাকায়। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের কাছে মাত্র নগদ ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার কোনো জমানো টাকা কিংবা কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এরপর তিনবার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও কোম্পানির শেয়ার ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। মির্জা আজমের সাথে বেড়েছে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণও। টানা ১৫ বছরে তার স্ত্রী আলেয়া আজমের সম্পদ বেড়েছে ৭৯ গুণেরও বেশি।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ
গোলাম দস্তগীর গাজী নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধনকুবের। তার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। নগদ আছে ৯ কোটি ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৬ টাকা। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। হলফনামা তথ্যমতে, মন্ত্রীর বার্ষিক আয় এক লাখ ২৬ হাজার। ব্যবসা থেকে আয় ৮২ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানত আছে ৯১ লাখ ৮২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৮ টাকা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আয় বেড়েছে সাড়ে ১১ গুণ
জাহিদ মালেকের আয় বেড়েছে সাড়ে ১১ গুণ। তার ৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি আয় বেড়েছে। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০.৩৭ গুণ, যা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। এই হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা।
বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর আয় ও সম্পদ ৮ গুণ বেড়েছে
বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর আয় ও সম্পদ ৮ গুণ বেড়েছে। তার চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ২৫ গুণ। আগে তার সম্পদ ছিল না, এবার পৌনে ২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। সম্পদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে চা বাগান, রাবার বাগান ও মৎস্য খামার। তার বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৬ টাকা। হলফনামায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ হিসাবে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ নতুন করে সঞ্চয় দূরে থাক, বরং তাদের জমাকৃত সঞ্চয়ই ভেঙে খাচ্ছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের হিসাবে দেখা গেছে দিনকে দিন সঞ্চয়পত্র কেনার পরিবর্তে মানুষ বেচে দিচ্ছে। ফলে এ থেকে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, সৃষ্ট দ্রব্যমূল্যের চাপ সামলাতে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে মানুষ। আর যে হারে সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে তার চেয়ে কম হারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বিগত বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি, নেতাদের সম্পদ, টাকা-পয়সা বেড়েছে তরতর করে।
নগরীর উত্তরা এলাকায় বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী হাসনাত করিম সোনার বাংলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা এত টাকার মালিক কীভাবে হচ্ছে? তারাতো রাজা বাদশাহর বা জমিদারের সন্তান ছিলেন না। ওনাদের অঢেল সম্পদের উৎস জনসমক্ষে আনা দরকার। জনগণের এগুলো জানার অধিকার আছে। আমি এত বছর চাকরি করি কিন্তু এ বাজারে সামান্য কয়েক লাখ টাকা জমাতে পারিনি। খালি এমপি-মন্ত্রীর আয়-রোজগারই বাড়ছে। আমাদের বাড়ে না। এরা দেশেরও সেবা করে, আবার ব্যবসাও করে? কীভাবে? এরা কী টাকার গাছ লাগিয়েছে নাকি?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামার তথ্য শুধু প্রার্থীদের বিষয়ে ভোটারদের ধারণা দেওয়া নয়, আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। প্রার্থীর বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগ থাকলে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কারও অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নিজেদের ক্ষমতাবলেই এ কাজগুলো দুদক করতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ইফতেখারুজ্জামানের মতে, তবে ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে হাত দিলে হাত পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে অনেকে মনে করেন। এ কারণেই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …