তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় সরকার জড়িত অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একই ট্রেন কয়েক দিন আগে লাইনচ্যুত হয়েছিলো। এই ট্রেনের নিরাপত্তা কোথায়? এ ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার এর জন্য দায়ী। মঙ্গলবার বিকালে ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ট্রেনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কে করেছে তা এখন জনগণের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর পুলিশ কমিশনার সাহেব আপনি কোনো কিছু তদন্ত না করেই বলে দিলেন যে, এটা অবরোধ-হরতালকারীরা করেছে? এই অবরোধ-হরতালকারীদের ওপর দায় চাপানো এটা একটা পূর্ব পরিকল্পনা। এটা আমরা বার বার বলি যে, সরকার এখন জঙ্গি নাটক করবে, নাশকতার নাটক করবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে এটা বলে আসছি। সেটা এখন বাস্তবে প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে আজকের রেলওয়ের ঘটনাটাও তাই।
তিনি বলেন, রাশিয়া ও ভারতের ওপর ভর করে সরকার একতরফা নির্বাচন করার পায়তারা করছে। গোটা জাতি এক ভয়ংকর জঙ্গলের মধ্যে বাস করছে। এক অন্ধকার জঙ্গল যেখানে চারিদিকে ঘিরে আছে ভয় ও আতঙ্কের ব্যারিকেড, এই ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করাই হয়েছে একদলীয় নির্বাচনকে সুসম্পন্ন করা, ভোটারবিহীন নির্বাচনকে নিশ্চিত করা। এব্যাপারে শেখ হাসিনা একেবারেই বেপরোয়া।
উনি ভাবছেন রাশিয়া আছে, ভারত আছে, আমার আবার ভয় কিসের? রাশিয়া ও ভারত আমাকে সমর্থন দিলে আমার কিসের ভোট সেন্টার লাগবে, কিসের ভোটার লাগবে, কিসের স্বচ্ছ নির্বাচন লাগবে?
রিজভী বলেন, তাদের (রাশিয়া ও ভারত) কর্তা ব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন। তাতো দেবেনই। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক বা না থাকুক এটা তো ভারতের কোনো যায় আসে না। আর রাশিয়ার তো মোটেও যায় আসে না। নিজের দেশে গণতন্ত্রের বিশাল ঘাটতি একনায়তন্ত্রের শাসন। সুতরাং আজকে তাদের সমর্থনে শেখ হাসিনার আজকে পোয়া-বারো। ভারত নিজে গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু সে অন্য দেশের গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হোক এটা তারা চাচ্ছে না। যে ক‘জন কর্তা ব্যক্তিরা এসেছেন তারা প্রত্যেকেই জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে আজকে জনসমর্থনহীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। এতে বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত ও হতবাক। ভারতের কাছ থেকে তো এটা কামনা করা যায় না। কিন্তু যারা আধিপত্যবাদী শক্তি তারা সব সময় চায় তার আশে-পাশের ছোট দেশগুলোকে কবজা করতে।
ভারতের বর্তমান অবস্থানকে ‘বড় দুর্ভাগ্যজনক’ অভিহিত করে তিনি আরো বলেন, আমি জহরলাল নেহেরু সাহেবের একটি বই পড়েছিলাম ‘অব ইন্ডিয়া’। তাতে এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ফর এসমল নেশন স্ট্যাট ইজ গ্রুথ ইট ওয়াজ সারভাইভ অনলি কালচারাল অটোনোমাস এরিয়া বাট নট পলিটিক্যাল ইন্ডিপেন্ডেট এরিয়া। আজকে কি সেই পলিসি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে ভারত? যে তারা তাদের আশে-পাশে ইন্ডিন্ডেন্ট টেরিটরি দেখতে চায় না। বড়জোড় একটা কালচারাল অটোনোমাস সাংস্কৃতিক স্বায়ত্বশাসিত এরিয়া তাদের পরিচালনায়, এই মনোবৃত্তিরই পরিপূরক প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। আমি বলতে চাই, একাত্তর সালে আমাদের ভরসা ছিলো জনগণ, মুক্তিযুদ্ধে আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে এবং পথ চিনিয়ে দিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের। আমরা গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছি, আমরা সশ্বস্ত্র বিপ্লব করছি না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আন্দোলনের নতুন ঘোষণা বুধবার। আগামীকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলমান আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন।