প্রগতির মালিক প্রাণনাথ দাসের শত কোটি টাকা প্রতারণা: মামলা হয়নি

গ্রাহকদের শতকোটি টাকা প্রতারণা করে স্বপরিবারে লাপাত্তা হওয়া সাতক্ষীরায় প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক প্রাণনাথ দাস, চেয়ারম্যান ইতি রানী বিশ্বাস ও সম্পাদক বিশ্বনাথ দাসের বিরুদ্ধে  এজাহার দায়ের হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি।

এদিকে লাপাত্তা হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর না হতেই উত্তর রাজারবাগান এলাকার মুনসুর আলী মেম্বরের ছেলে অহিদুুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে কাটিয়া সরকারপাড়ার প্রভাস চন্দ্র গাইন, ছাকার মোড়ের খোকা ওরফে মেঝ ভাই, ক্যাপ্টেন মতিয়ার, পলাশ, ফারুকসহ কয়েকজন বুধবার বোর ৬টার দিকে পুরাতন সাতক্ষীরা হাটের মোড়ে প্রগতি এন্টারপ্রাইজের মালিক প্রাণনাথ দাসের হস্তান্তরিত মধুমোল্লারডাঙি এলাকার গণেশ দাসের ছেলে অসীম দাস সোনার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শার্টারের তালা ভেঙে এক হাজার গ্যাসভর্তি সিলি-ার দুটি ট্রাকে করে লুট করা হলেও অভিযোগটি রয়েছে তদন্তাধীন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের ও বর্তমানে পুরাতন সাতক্ষীরার বাসিন্দা প্রাণনাথ দাস ২০০২ সালে রুপালী লাইফ ইনসিওরেন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জেলা ও জেলার বাইরে বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বহু টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে ২০১২ সালে ১২১নং সমবায় রেজিষ্ট্রেশন মূলে প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি খোলেন প্রাণনাথ দাশ। সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বড় ভাই বিশ্বনাথ দাশকে নিযুক্ত করে গত ১০ বছরে ডিপিএস ও ফিক্সড ডিপোজিট এর মাধ্যমে শত গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা প্রতারণা করেন। প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি পুরাতন সাতক্ষীরায় বাড়িসহ গাভায় চার বিঘা জমি, সদুরডাঙিতে দুটি বাড়ি, বুধহাটায় দুটি অফিস, মুন্সিপাড়ায় চার শতক জমি ও পুরাতন সাতক্ষীরায় দুটি শোরুম খোলেন। একপর্যায়ে প্রাণনাথ টিকেট গ্রামে নিজের পৈতৃক ১১ বিঘা জমি, মুন্সিপাড়ার চার শতক জমি, গাভার জমিসহ সদুরডাঙার একটি বাড়ি, কুল্যার দুটি অফিস বিক্রি করে দেন। বিক্রি করেন তার কয়েকটি বাস ও প্রাইভেটকার। সদুরডাঙির একটি বাড়ি ও পুরাতন সাতক্ষীরার বাড়ি প্রাইম ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখা থেকে এক কোটি ১৩ লাখ টাকার ঋণ নেওয়ায় তা আর হস্তান্তর হয়নি। এসব জমি বিক্রি করার খবর পেয়ে গ্রাহকরা মুনাফা ও আসল টাকা ফেরৎ চাইলে প্রাননাথ টালবাহানা শুরু করেন।

এসব টাকা ফিরে পেতে তারা প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাদের শরনাপন্ন হয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভূধর সরকারসহ শতাধিক ব্যক্তি চলতি বছরের ১৮অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, র‌্যাব-৬ ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে প্রাননাথ দাশ, তার ভাই বিশ্বনাথ দাশ ও স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস যাতে গ্রাহকদের বিপুল পরিমান টাকা বিদেশে পাঠিয়ে নিজেরা পালাতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার আবেদন করা হয়। এরপরও কতিপয় গ্রাহক টাকা পাওয়ার দাবিতে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রাণনাথের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে প্রাণনাথ দাশ অজ্ঞাত স্থানে থেকে উত্তর রাজারবাগানের আসাদুজ্জামান তুহিন আন্দোলনকারিদের হুমকি দেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রাণনাথের স্ত্রী ও মেয়ে শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালি গ্রামের প্রাননাথ দাসের দক্ষিণহস্ত  কৃষ্ণপদ ম-লের ছেলে মিলন ম-ল, প্রাণনাথ দাসের ভায়রা ভাই যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার ডহরসিংগা গ্রামের নির্মল কুমার দাশের ছেলে মিঠুন কুমার দাশ, আসাদুজ্জামান তুহিনসহ কয়েকজনের সহযোগিতায় বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি ইজিবাইকে উঠে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। পরবর্তীতে জানা যায় যে প্রাণনাথ তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মিলন ম-লের সহযোগতিায় শ্যামনগরের রমজাননগরের সীমান্তবর্তী কালিন্দি নদী  পাড়ি দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার দমদম এলাকার নিউটাউনের বাড়িতে চলে গেছেন। প্রাণনাথের সপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার খবরে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। বিকেল চারটায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক অরুন কুমার কর্মকার বাদি হয়ে প্রাণনাথ, স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস ও বড় ভাই বিশ্বনাথ দাশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। এরআগে গ্রাহকরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। রাতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। একইভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তারা থানায় এসে মামলা না হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো: নজরুল ইসলাম ঘটনার তদন্তে নামেন।

এদিকে মধুমোল্লারডাঙি এলাকার অসীম দাস সোনা জানান, তিনি প্রাণনাথ দাসের কাছ থেকে ১৫দিন আগে তার প্রগতি এন্টারপ্রাইজ গ্যাস সিলি-ারের একটি লট কিনে নিয়ে সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। বুধবার ভোর ৬টার দিকে রাজারবাগান এলাকার আসাদুজ্জামান তুহিন, কাটিয়া সরকারপাড়ার প্রভাষচন্দ্র গাইনসহ ৮/১০জন তার মালিকানাধীন প্রগতি এন্টারপ্রাইজের শার্টারের তালা ভেঙে দুটি ট্রাকে করে ১২লাখ টাকা মূল্যের এক হাজার গ্যাস ভর্তি সিলি-ার লুট করে নিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি ঘর মালিক  জাহিদ হোসেনের কাছ থেকে জানতে পারেন। খবর পেয়ে তিনি ও ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ট্রাক আটক করেন। এ সময় আসাদুজ্জামান তুহিন ম্যানেজার বেল্লাল হোসেনের মোবাইল কেড়ে নেন। তার কাছ থেকেও মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। বেল্লাল হোসেনকে মটর সাইকেলে তুলে শহরের পোষ্ট অফিস মোড়ে  নামিয়ে দিয়ে নারিকেলতলার দিকে চলে যায়। এ ঘটনায় তিনি বুধবার থানায় একটি অভিযোগ দিলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল ৮টার দিকে পলাশ, মতিয়ার রহমানসহ কয়েকজন পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলার প্রগতি এন্টারপ্রাইজের একটি শোরুমের তালা থেকে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বলেন, অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ পরিদর্শক মো: নজরুল ইসলামকে ঘটনার তদন্তে পাঠানো হয়। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।