বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোনও রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। এই যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। দেশে তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বরগুনা, নেত্রকোনা এবং রাঙামাটি জেলায় নির্বাচনি জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল আবার তারা তাদের সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে (মাঠে) নেমেছে। মাত্র কয়েক দিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিশপ্লেট খুলে ফেলল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারলো। আবার তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় আর কোনোদিন রাজনীতি না করার মুচলেকা, নাকে খত দিয়ে বিদেশে গিয়েছে। এখন বিদেশ থেকে হুকুম চালু করেছে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছেন, পাপের ভাগিদার আপনারাই হবেন। তারেক জিয়ার কিছুই হবে না। ও তো ওখানে বসে বসে জুয়া খেলে ভালোই আছে। এখানে আপনাদের হুকুম দিচ্ছে, আপনারা নাচেন। কার জন্য নাচেন? ও তো এখানে আসবে না। ও তো দেশেই আসে না। মা মরে মরে, তাকেও দেখতে দেশে আসে না। এত সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক না। এ দেশের মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।
ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে ইলেকশন, এই নির্বাচন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তি মতো ভোট দিক।
তিনি বলেন, সকলে জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকলে উন্নতি হয়। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে, উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, তিনি (শেখ হাসিনা) সেটা ২০০১ সালে করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এ-দেশ কোনও দিনই নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মন মতো প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।
তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আজ দেশ বদলে গেছে, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। এটি পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো সেই ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই আমাদের এই বাংলাদেশে প্রতিটি জনগণকে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করবো। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজব্যবস্থা স্মার্ট হবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবো। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো; এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। পরে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন তিনি।