কোনো বাহিনী নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করলে তাদের নাম গণমাধ্যমে বলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিলেট অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় থাকা একাধিক কর্মকর্তা সিইসির এমন হুঁশিয়ারির কথা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। সভায় সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষক ছাড়া ওসি, পুলিশ সুপার বা যেকোনো কর্মকর্তা প্রিসাইডিং অফিসার না ডাকলে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো ভোট প্রতিহত করতে বড় কোনো কর্মসূচি দিলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তবে তা মোকাবিলা করার প্রস্তুতিও আছে নির্বাচন কমিশনের।
শনিবার একদিনের সফরে সিলেটে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সকাল ১০টায় সকাল সিলেট সার্কিট হাউজে জেলার ৬ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে এই মতবিনিময়। শুরুতেই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা সরকার থেকে জনবলের যে সহায়তা পেয়েছি সেটা দিয়ে নির্বাচনটাকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি মাঠে সব প্রার্থীরা যাতে সমান সুযোগ পায় সে জন্য তার কমিশন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সরকারের সহযোগিতা আর মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় নির্বাচনি কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সিইসি বেলা ১২টার দিকে সিলেট শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে সিলেট বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ সময় তিনি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য করতে নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আসনের নির্বাচনি পরিবেশ সম্পর্কে ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মতামত শুনেন। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নির্দেশনা দেন। সব শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
শুরুতেই সিইসি বলেন, সিলেটসহ আটটি বিভাগে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে যেটুকু প্রতীয়মান হয়েছে তাতে এই নির্বাচনে বড় কোনো অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। দুই-একটি স্থানে পোস্টার ছেড়াসহ ছোটখাটো অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হবে এটা শতভাগ নিশ্চিত। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার আন্তর্জাতিক যে মানদণ্ড আছে তা এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে। কারণ, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে যেমন দায়বদ্ধতা আছে তেমন দেশের মানুষের কাছেও দায়বদ্ধ নির্বাচন কমিশন।
এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না এবং নির্বাচন বর্জন করে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে কিনা- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ থাকে। এই মুহূর্তে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। আপনারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছেন একটি দল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জনগণকে আহ্বান করেছে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা জন্য। এটা যদি এভাবেই আহ্বান করে শান্তিপূর্ণভাবে, তবে তা কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। কারণ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন বর্জন কিংবা নির্বাচনের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে না। তারা যদি নির্বাচন প্রতিহত করতে চায় তবে একটি চ্যালেঞ্জ আসবে। আমাদের তা মোকাবিলা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে। নির্বাচন বর্জনকারীরা যদি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন প্রতিহত করার যে আহ্বান জানাচ্ছে তার মধ্যে থাকলে কোনো সংকট তৈরি হবে না। কিন্তু তারা যদি নির্বাচনের দিন কিংবা তার আগে তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান পরিবর্তন করে, ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা কিংবা ভোটগ্রহণে বাধা প্রদানের কোনো কর্মসূচি দেয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি রয়েছে।’
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকীর সভাপতিত্বে প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে করা মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। উপস্থিত ছিলেন সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহমেদ।