বিএনপি নেতা নবী ৩ দিনের রিমান্ডে

বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে গত বছরের নভেম্বরে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রাজধানীর গোপীবাগে শুক্রবার রাতে ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায়ও নবী উল্লাহ নবীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করছে ডিবি পুলিশ। রিমান্ডে নেওয়ার পর তাকে এ ঘটনার বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেছেন।

রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার এজাহার নামীয় আসামি নবী উল্লাহ নবী ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইপাড়গামী রাস্তার সড়কে বিজিবি মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর অবস্থান করে বেআইনিভাবে জনমাগম করেন এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট-পাটকেল, বাঁশ-লাঠি ও ককটেল নিয়ে সজ্জিত হয়ে সরকার বিরোধী উসকানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দেন। তারা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করেন।

নবীসহ অপর আসামিরা পুলিশের ওপর  ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। তারা গ্রেট তুরাগ নামে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাস্তায় দাঙ্গাহাঙ্গামা শুরু করেন। নবীসহ অন্যরা পুলিশের কাজে বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করেন।

বিশ্বস্ত গুপ্তচরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে নবী উল্লাহ নবীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আসামি নবী উল্লাহ নবী রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা ও ইন্ধনদাতা। ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সঠিক নাম ঠিকানা শনাক্ত করে গ্রেফতার করা, অর্থের জোগানদাতা ও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য আসামিকে সাতদিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

এর আগে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয় নবী উল্লাহ নবীকে। তখন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ যে মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সেটিতে গ্রেফতারের কথা তখন বলা হয়নি।

এদিকে আজ সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের পরিকল্পনা হিসেবে বিএনপির নেতারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়।

হারুন জানান, আগুন দেওয়ার এই ঘটনায় বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবী অর্থ সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যুবদল নেতা কাজী মনসুরের দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও গণমাধ্যমকে দিয়েছে ডিবি পুলিশ। সেখানে ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার বর্ণনা রয়েছে।

কাজী মনসুর ডিবিকে জানান, তারা গতকাল (বৃহস্পতিবার) একটি ভার্চুয়াল মিটিং করেন। মিটিংয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নসহ আরও অনেকে ছিলেন। প্রায় ১৭ মিনিট ধরে মিটিংটি চলে। মিটিংয়ে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম সিদ্ধান্ত হলো, ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ করা যাতে ভোটাররা ভয়ে সেখানে না আসেন। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হয় ট্রেনে আগুন দেওয়ার।

মিটিংয়ে যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন জিজ্ঞাসা করেন ট্রেনে আগুন দিতে পারবে কে? উপস্থিত অন্য কেউ কিছু না বললেও একজন রাজি হন।

রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন— কিশোরগঞ্জ থেকে আসা কোনো ট্রেন ঢাকায় ঢোকার পর কিংবা নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেনে আগুন দিতে হবে। এরপর রাজি হওয়া ব্যক্তিকে আগুনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।