তোফাজ্জল হোসাইন কামাল
দেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া কিছু হত্যাকাণ্ড ছিল ২০২৩ সালের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুর বিষয়। জনমনে নাড়া দেয়া, দেশজুড়ে সাড়া ফেলে দেয়া এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজও করেছে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। সাফল্যও পেয়েছে তারা। ধরা পড়েছে প্রতিটি ঘটনার সাথে জড়িতরা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০২৩ সালের পুরোটা সময়েই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কম ঘটেছে।
পুলিশ পিটিয়ে হত্যা : ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষ শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে সমাবেশ পন্ড করে দেয়। এর আগে একটি মিছিল থেকে প্রধান বিচারপতির বাসায় ঢুকে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। দফায় দফায় সংঘর্ষের মাঝেই কাকরাইল এলাকায় পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের ওপর হামলে পড়ে লাঠিসোটা হাতে থাকা ব্যক্তিরা। তাদের বেধড়ক পিটুনীতে পারভেজ মারা যায়। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলায় সরকার বিরোধী জোটের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশেই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। বছরের শেষ দিকে এসে এ হত্যার ঘটনাটি নাড়া দেয় সবাইকে।
একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা : ১ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিন সদস্যকে গলাকেটে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। আশুলিয়ার জামগড়া ফকির বাড়ির মোড় এলাকার ৬ তলা ভবনের ৪ তলার ফ্ল্যাট থেকে পোশাক শ্রমিক দম্পতি ও তাদের একমাত্র সন্তানসহ তিনজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ থানার লোহাগড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে মুক্তারুল হোসেন বাবুল, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম ও তাদের ছেলে মেহেদী হাসান জয়। এ ঘটনায় সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম নামে দুজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। সাগর টাঙ্গাইলের মোবারক ওরফে মোগবর আলীর ছেলে। প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতেই তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করেছিলেন তারা। এই স্বামী ও স্ত্রী ছিলেন সিরিয়াল কিলার। সাগর র্যাবকে জানায়, তিনি কবিরাজি চিকিৎসার আড়ালে টার্গেট ঠিক করতেন। এরপর সেই পরিবারের ঘনিষ্ঠ হয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে সেই ব্যক্তিতে হত্যা করতেন। ২০২০ সালে সাগর ও তার স্ত্রী টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে একই কায়দায় গলা কেটে হত্যা করে।
দুর্বৃত্তের গুলী, আইনজীবীর মৃত্যু : ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সিটি পেট্রলপাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝের সড়কে গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেলে চড়ে বাসায় যাওয়ার সময় গুলীবিদ্ধ হন আইনজীবী ভূবন চন্দ্র শীল। তার মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায় গুলী। এছাড়া আরও দুই পথচারী আহত হন। গুলীবিদ্ধ ভূবনকে প্রথমে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ দিন পর মারা যান ভূবন। এ ঘটনায় পুলিশ মারুফ বিল্লাহ হিমেল নামে একজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মূল হোতা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ঘটনার পর পুলিশ জানায়, তাদের ধারণা, শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলী ছুড়েছিলেন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের লোকজন। সে সময় আইনজীবী ভুবন মাথায় গুলীবিদ্ধ হন। কয়েক মাস আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন জামিনে মুক্তি পান। শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও তারিক সাঈদ মামুন একসময় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী।
অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর করুণ মৃত্যু : জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর অনলাইন জুয়া আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি নামে এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিগো লাইভ নামক একটি অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া খেলতেন। তিন বছরে জুয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ খোয়ান তিনি। মৃত্যুর আগে অর্থসংকট পড়ে যান। এ নিয়ে কথিত প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রুফি ওরফে উরফি জিয়ার সাথে তার নানা সময়ে ঝগড়া হয়। শেষদিন হিমুর বাসায় জিয়াউদ্দিন এলে এসব বিষয় নিয়ে আবারও বাকবিত-া হয়। একপর্যায়ে গলায় ফাঁস দেন হিমু। তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলে রুফি সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। পরে র্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তবে হিমু আসলেই কি আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
যুবলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা : জুলাই মাসে রাজধানীর শাহজাহানপুরের মালিবাগ বাজার রোডের ১৫৬ নম্বর বাড়ির সামনে অলিউল্লাহ অলি ওরফে রুবেল নামে যুবলীগের এক নেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন দুর্বৃত্তরা। তার বাসা থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে ছিল ঘটনাটি। সেই দৃশ্য ধরা পড়ে সিসিটিভি ফুটেজে। গুরুতর অবস্থায় অলিউল্লাহকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই হত্যাকা-ের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিবি ও র্যাব ১০ জনকে গ্রেফতারের পর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিলেন যুবলীগ নেতা রুবেল। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে শাহজালাল নামের ব্যক্তির সঙ্গে তার শত্রুতা তৈরি হয়। এরপর তাকে উচিত শিক্ষা দিতে হত্যা করা হয়।
স্কুলছাত্রকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা : রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের রড চুরির অভিযোগে আকাশ নামে এক স্কুলছাত্রকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা অনেককে কাঁদিয়েছে। আকাশ স্থানীয় একটি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। এমনকি আকাশকে পানিও খেতে দেয়নি হত্যাকারীরা। মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় বরাবো মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে ৭ সেপ্টেম্বর নৃশংস এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, আকাশকে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে দেখে চোর চোর বলে ধাওয়া করেন হত্যাকারীরা। এসময় তাকে রড চোর সন্দেহে ধরে ফেলে এবং ছয় সাতজন মিলে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ঝুঁলিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করে। পরদিন তার অবস্থা খারাপ দেখে আকাশের ফুপু মালতী বেগমকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বলে নির্যাতনকারীরা। বাসায় নেয়ার পর আকাশ মারা যায়। আলোচিত এই হত্যাকা-ের আগে আকাশকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকে। এ ঘটনায় র্যাব পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পেটে পাড়া দিয়ে গর্ভের সন্তানসহ মাকে হত্যা : ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ খালাশপীর এলাকায় আখ ক্ষেতের ভেতর থেকে অজ্ঞাত এক নারী ও সদ্যপ্রসূত এক কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মাসুদ মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পাওয়া যায় ওই নারীর পরিচয়, তার নাম শান্তনা। শান্তনার সাথে ঢাকার গাজীপুরে গার্মেন্টেসে কাজের সুবাদে পরিচয় হয় মাসুদ মিয়ার। মাসুদ ছিল বিবাহিত। কিন্তু তিনি বিয়ের কথা গোপন রেখে শান্তনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এতে শান্তনা গর্ভবতী হলে মাসুদ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ঢাকা ছাড়েন। অনেকদিন ঢাকায় না আসায় শান্তনা মাসুদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে গিয়ে হাজির হন। সেখানে তিনি তার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করেন। কিন্তু মাসুদের প্রথম স্ত্রী বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু শান্তনাকে মাসুদ বিয়ে করবেন আশ্বাস দিয়ে ঢাকার বাসে তুলে দেন। পথিমধ্যে বাস থেকে আবার তাকে নামিয়েও আনেন। এরপর নিজ বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে একটি পাটক্ষেতে নিয়ে পেটে পাড়া দিয়ে শ্বাসরোধ করে শান্তনাকে হত্যা করেন মাসুদ। ওই সময় শান্তনার গর্ভের কন্যা ভূমিষ্ঠ হলেও সেখানেই মারা যায়। এরপর মাসুদ ঠা-া মাথায় চলে যান বাড়িতে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি মাসুদের। তাকে অবশেষে গ্রেফতার করে র্যাব।
জেপি নেতার ব্ল্যাকমেইল, অবশেষে লাশ হাসপাতাল চত্বরে : ১৫ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার কলেজ গেট এলাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে সাধারণ লোকজন পুলিশে খবর দেয়। লাশ উদ্ধারের পর জানা যায়, তিনি ছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা এবং ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়া। আলোচিত এ ঘটনায় দুই নারীকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার দুই নারীর মধ্যে একজনের সাথে পরিচয় হয় সালামের, এক সুপারশপে। পরে তা অনৈতিক সম্পর্কে রূপ নেয়। এই সম্পর্কের বিভিন্ন মুহূর্ত গোপনে ভিডিও করে রাখেন সালাম। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। সালামের এমন কাজে দিশেহারা ওই নারী ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিজ বাড়িতে চলে যান। কিন্তু তাতেও তার মুক্তি মেলে না। সালামের ব্ল্যাকমেইল চলতেই থাকে। ঘটনার দিন বিকেলে সালাম মেয়েটির বাড়িতে যান। এ সময় নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় সালামের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বারবার নির্যাতন করা হয়। পরে সালাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে মৃত্যু হয়। সালামের মৃত্যু বিষয়টি টের পেয়ে অন্যরা সটকে পড়ে। ওই নারীর মা সালামের লাশ গাড়িতে করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে পালিয়ে যায়।
বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলায় গৃহকর্মীকে হত্যা : ২৬ আগস্ট রাজধানীর কলাবাগানে হেনা নামে এক গৃহকর্মী হত্যার ঘটনা হইচই ফেলে দেয়। কারণ হেনাকে হত্যার পর বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল গৃহকর্ত্রী। পরে প্রতিবেশীরা লাশের গন্ধ পেয়ে পুলিশের খবর দেন। গৃহকর্ত্রীকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
গৃহকর্ত্রী সাথী আকতার পারভীন ডলি একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি নিজেকে সরকার দলীয় নেত্রী বলেও পরিচয় দিতেন। ডলির বাসায় কাজ করতেন হেনা। ঘটনার দিন বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলায় গৃহকর্মী হেনাকে মারধর করেন ডলি। এরপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে গ্রেফতার এড়াতে লাশ ও মোবাইল ফোন বাসায় রেখে পালিয়ে ডলি তার সাবেক স্বামীর কাছে যান। সাবেক স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে খবর দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেন।
মোবাইল ফোনে আসক্ত ছেলেকে হত্যা করেন মা : ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আমিরুল হাসান জয় (১২) মোবাইল ফোনে গেম খেলায় আসক্ত ছিল। বিষয়টি মা সুহেনা বেগম কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। আর এই মোবাইল গেম আসক্তিই কাল হয়েছিল জয়ের জন্য। মা জয়কে বারবার পড়তে বললেও শোনেনি সে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ছেলেকে হত্যা করেন তিনি। আলোচিত এই ঘটনার পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে সেই মাকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি ঘটে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের ইন্দ্রানগর পানপুঞ্জি (জাদুরগুল) এলাকায়।
পুলিশের সোর্সের চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা : জুলাই মাসের শেষের দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে সাইফুল ইসলাম (২৬) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। কেরানীগঞ্জ থানার শুভাড্ড্যা ইউনিয়নের খেজুরবাগ সাতপাখি স্কুল রোড এলাকায় একটি মুদি দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। হত্যার সময় কাঁটা চামচ দিয়ে সাইফুলের দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, সাইফুল পুলিশের সোর্সের কাজ করতেন এবং এলাকার মাদক ব্যবসার খোঁজখবর পুলিশকে জানাতেন। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় সাইফুলের জন্য। অথচ সাইফুলের আমেরিকা যাওয়ার ভিসাও হয়েছিল। তাকে একটি দোকানের সামনে একা পেয়ে রড, ব্যাট, হকস্টিক ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার দুই চোখ চামচ দিয়ে উপড়ে ফেলে তুলে নেয় খুনীরা। এলাকার অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সাইফুল। জানে আলম নামে একজনকেও ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আলম জামিনে বেরিয়ে এসে তাকে দলবল নিয়ে সাইফুলকে হত্যা করে।
চোর সন্দেহে শিশু হাসপাতালের সামনে পিটিয়ে হত্যা : ২৬ মার্চ রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার শিশু হাসপাতালের সামনে চোর সন্দেহে মামুন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, শিশু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক ও আনসার সদস্যরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামুনের বড় ভাই জানান, সকালে মামুন মা ও তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আসে। পরে পরিবারকে পাঠিয়ে দেয়। দুপুরের দিকে একজন ফোন দিয়ে জানান, আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর হাসপাতালে এসে জানলাম, আনসার সদস্য, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও হেলপাররা আমার ভাইকে চোর বলে প্রথমে ধাওয়া দেয়। পরে তাকে ধরে এনে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে। মাসুদ রানা বলেন, আমার ভাই চুরি করলে সেটার জন্য দেশে আইন আছে। কেন তাকে পিটিয়ে মারা হলো? এখন তার বউ-বাচ্চার কি হবে?