দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে চারটি জাতীয় সংসদ পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছে। পঞ্চম জাতীয় সংসদ ৪ বছর ৮ মাস এবং ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ মাত্র ১২ দিন স্থায়ী ছিল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ হয়নি। এ আসনে ৩ জানুয়ারি ভোট নেওয়া হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্ক ওঠে। ওই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। অতীতের নির্বাচনগুলোর পর ইসি সার্বিক সব বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এলেও কেএম নূরুল হুদার কমিশন ছিল ব্যতিক্রম।
তবে ইসির নিয়মিত প্রকাশনা ‘নির্বাচন কমিশন বার্তা’য় ওই নির্বাচনের কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ওই নির্বাচনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার ও ৪০ হাজার ১৮৭৩টি ভোটকেন্দ্র ছিল। নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
আওয়ামী লীগ ২৫৯টি, জাতীয় পার্টি ২০টি, বিএনপি ৬টি, গণফোরাম ২টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ২টি আসনে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তৃতীয়বার দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। ওই সংসদ এখনো বহাল রয়েছে। সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৯ জানুয়ারি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল নির্বাচন বর্জন করে টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি ১৪৭টি আসনের ১৮ হাজার ২০৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হয়।
ব্যাপক সহিসংসতার কারণে ৫৯৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়। ১৪৭টি নির্বাচনি এলাকায় গড়ে ৪০.০৪ শতাংশ ভোট পড়ে। ওই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪টি, জাতীয় পার্টি ৩৪টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৫টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬ আসনে জয়ী হন।
এ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি সংসদ গঠিত হয়। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর সংসদ বহাল ছিল।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। নোয়াখালী-১ আসনের বৈধ প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের ভোট বাতিল করে কমিশন।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ভোটার ছিলেন ৮ কোটি ৮৭ হাজার ৩ জন। ভোট পড়ে ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি, বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ ৩টি, জামায়াতে ইসলামী ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪টি আসনে জয়ী হন। ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি।
নবম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। ওই সংসদও পাঁচ বছর পূর্ণতা পায়।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ওই নির্বাচনে ৫৪টি দল অংশ নেয়। তখন নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নেওয়ার বিধান ছিল না।
ওই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৪ জন। আর ভোটকেন্দ্র ছিল ২৯ হাজার ৯৭৮টি। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
২০০১ সালের পর আর কোনো নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারেনি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬২টি, জামায়াতে ইসলামী ১৭টি, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬টি আসনে জয়ী হন। ভোট পড়ার হার ছিল ৭৫.৫৯ শতাংশ।
ওই বছরের ২৮ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ বছর সংসদ বহাল ছিল। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকার দায়িত্বে আসে।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে অন্তত ৮২টি দলের ৫৮৬ জন ও স্বতন্ত্র ২৮৪ জন প্রার্থীসহ ৮৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৫ জন ভোটার এবং ২৫ হাজার ৯৫২টি ভোটকেন্দ্র ছিল।
ভোট পড়ার হার ছিল ৭৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয় পায়। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি পায় ১১৬টি আসন। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ৩২টি, জামায়াতে ইসলামী ৩টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১টি আসনে জয়ী হন।
নির্বাচনের এক মাস দুদিন পর ওই বছরের ১৪ জুলাই সংসদ গঠিত হয়। ওই সংসদ ২০০১ সালের ১৩ জুলাই মেয়াদ শেষ করে। ওই সংসদও পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনের মাত্র চার মাসের কম সময়ের মধ্যে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবেদন ইসিতে পাওয়া যায়নি। তবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। মাত্র ১২ কার্যদিবস ছিল সংসদের স্থায়িত্বকাল। ওই বছরের ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙে যায়।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন ২৯৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। মুন্সীগঞ্জ-৩ ও কুষ্টিয়া-২ আসনের প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওইদিন এ দুটি আসনে ভোটগ্রহণ হয়নি।
এই নির্বাচনে ৭৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের ২৩৬৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপি তখন ১৪০টি আসনে জয়ী হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগ পায় ৮৮টি আসন। এছাড়া জাতীয় পার্টি ৩৫টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ ৫টি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ৫টি আসনে জয়ী হয়।
১৯৯১ সালের এই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৩ জন। ভোট পড়ে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৩টি। ভোটের হার ছিল ৫৫.৪৫ শতাংশ।
একই বছরের ৫ এপ্রিল পঞ্চম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর সংসদ ভেঙে যায়। ওই সংসদ চার বছর আট মাস স্থায়ী ছিল।