স্টাফ রিপোর্টার: জনমনে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যেই আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সকল বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকারদলীয় জোট, আরো কয়েকটি দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ভোট বর্জন করে ভোট না দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। ভোট বর্জন করার জন্য দু’দিনের হরতাল কর্মসূচী চলছে। এ পরিস্থিতিতে আজ উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
গতকাল শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তিনি নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সর্ম্পকে অবহিত করেন এবং ভোটারকে নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানান। ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কথা স্বীকার করে সিইসি বলেন, বেশকিছু দল ভোট বর্জন করে হরতাল অবরোধ পালন করছে। এর মধ্যে বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক, উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। ভোটে নাশকতা ও সহিংসতা হবে না তা একেবারেই বলা যাচ্ছে না। এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হতে হবে। ঘোষিত হরতাল-অবরোধের মধ্যে নাশকতা দৃশ্যমান হচ্ছে। কারা দায়ী সেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উদ্বেগ- সকল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা পরাভূত করে ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানান।
সিইসি বলেন, নির্বাচন করা সাংবাবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকার সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার কথা বার বার পুনব্যক্ত করেছে। সকলের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়। এ নির্বাচনে ১৯৭১ জন প্রার্থী ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। উৎসবমুখরভাবে প্রচারণা শেষ হয়েছে। সকলকে নিয়মকানুন মেনে দায়িত্বশীলদে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা সহ্য করা হবে না। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। ভোট কারচুপি, অর্থ লেনদেন ও পেশীশক্তির ব্যবহার কঠোরভাবে দমন করা হবে। ৪২ হাজার ১৪৮টি কেন্দ্রে, ২ লাখ ৬২ হাজার বুথে ভোট নেয়া হবে। ভোটারগণ ভোট প্রদান করতে গিয়ে কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হলে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেয়ার জন্য তিনি পরামর্শ প্রদান করেন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইমতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সকল জায়গা ব্যালট পেপার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে।
নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে স্বশস্ত্র বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রায় ১২ লাখ ভোটার রয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে, অংশ নিয়েছে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট করার কথা বারবার বলা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ করেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ১৬ লাখ লোক ভোটের কাজে নিয়োজিত হবেন। এতে আট লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আর আট লাখ থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
গত ১৫ নবেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। সে অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন, যা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। ভোটগ্রহণ চলবে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ৩০০ আসনের মধ্যে রোববার ভোট হবে ২৯৯ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে পরে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
ভোটার : মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।
কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ : ৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
কীভাবে ভোট : এবার সব আসনেই সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে।
ফল ঘোষণা : ভোট গণনার কাজ শেষ হওয়ার পর পরই প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবহৃত ব্যালট পেপার ভর্তি সিলমোহরকৃত বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট, ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাব সরাসরি অথবা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। তিনি প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল যোগ করে প্রত্যেক প্রার্থীর ফলাফল নির্ধারণ করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী : এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন ১৯৭০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৪ জন দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী, বাকি ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র।
কোন দলের কত প্রার্থী : এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পাটির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন।
বিধিনিষেধ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল ও ২৪ ঘণ্টা সর্বসাধারণের যান চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এসময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
পর্যবেক্ষণ : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেখার জন্য ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবে।
বাজেট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা। এ নির্বাচনে আসনপ্রতি সাত কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ব্যয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।