‘কয়েকজন ব্যক্তির ছবিযুক্ত টয়লেটে এক ব্যক্তি মূত্রত্যাগ করছেন’ এমন একটি ছবি প্রচার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এ ছবির সঙ্গে কিছু তথ্য রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পাবলিক টয়লেটে কী এ ধরনের ছবি দেখতে পাওয়া যাবে?
সম্প্রতি টিকটকসহ ফেসবুকে ছবিটি এসব তথ্য প্রচার হতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে এ সম্পর্কিত সম্ভাব্য সবচেয়ে পুরনো পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায় নরেন্দ্র কুম্ভত নামে একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের টুইটে। ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রচারিত টুইটটিতে বলা হয়, ‘আইসল্যান্ডের নাগরিকরা মূত্রত্যাগের স্থানে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ছবি লাগিয়েছে। ভারতীয়দেরও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ আইসল্যান্ড নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, ‘আইসল্যান্ডই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যারা ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের পর দেশটির শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠিয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে আইসল্যান্ডের একটি কারাগারের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ওই কারাগারে ২০০৮ সালে আইসল্যান্ডে আর্থিক সংকটের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক প্রধানরা তাদের সাজা ভোগ করছেন।’
প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কিওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেশটিতে দুর্নীতিতে অবস্থান, দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন ব্যাংকার ও রাজনীতিবিদদের সাজার প্রসঙ্গেও জানা যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে আইসল্যান্ডের বেশ কয়েকটি বড় বড় ব্যাংক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিবাদ করে। ফলে ওই সময় ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হয় এবং অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আইসল্যান্ডে প্রতি বছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া আইসল্যান্ডে প্রতি বছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা এবং তাদের ছবি পরবর্তী এক বছরের জন্য কমোডে জুড়ে দেওয়ার দাবিটির সঙ্গে যে ছবিটি প্রচার করা হয়—সেটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তির ছবির ওপর মূত্রত্যাগের ছবিটি তোলা হয় ২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল।
ছবিটি বার্তা সংস্থা এএফপির ফটোগ্রাফার অলিভিয়ার মরিন আইসল্যান্ডের সেন্ট্রাল রিকজাভিকের সোদোমা বারের টয়লেট থেকে তুলেছেন।
টয়লেটটিতে ওই সব সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ছবি লাগানো হয়েছিল, যারা আইসল্যান্ডে ২০০৮ সালে আর্থিক বিপর্যয়ের পর পালিয়ে যায়। ওই সময় দেশটির অর্থনৈতিক পতনের সাত মাস পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।
অর্থাৎ ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির কারণে ব্যাপক আর্থিক সংকটে পড়ে ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ড। এ ঘটনায় দেশটির শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হয়। পরে ২০০৯ সালের শুরুর দিকে দেশটিতে পুনরায় নির্বাচন হয়।
ওই সময় প্রতিবাদের অংশ হিসেবে দেশটির রাজধানীর একটি বারের টয়লেটে আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কিছু সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ছবি লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই ছবির সঙ্গে আইসল্যান্ডে প্রতি বছর দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশের একটি দাবি ভিত্তিহীনভাবে জুড়ে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়ে আসছে।