গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর কনকনে শীতে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চল বিপর্যস্থ

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীতে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরাসহ উপকূলী এলাকার জনজীবন। বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে দিনভর ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় বসবাসরত ২৩ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ নি¤œ আয়ের মানুষ তাদের আয়-রোজগার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধরা পড়েছে ভোগান্তিতে। বিশেজ্ঞরা বলছেন, উপকূলীয় জেলাগুলোতে শীত পড়ত কম। কারণ, সমুদ্র্রের কাছাকাছি এলাকায় জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। ফলে হিমালয় পেরিয়ে আসা শীতের শুষ্ক বাতাস উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র্র শীত থাকছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, তা মূলত কুয়াশার কারণে ঘটছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, আগামী আরো দুই-তিন দিন শীতের অনুভূতি বেশি থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত শীতার্তদের মাঝে যে পরিমাণ শীত বন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলতায় খুবই সীমিত।

তীব্র শীতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। প্রচন্ড শীতে আয়-রোজগার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। গরম কাপড় ছাড়া সাধারণত কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পরছেন না। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় অনেকেই খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ স্বল্পমূল্যে শীতবস্ত্র কিনতে পুরানো পোশাকের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। বৃহষ্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যাক রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনের বেশি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। শহরের শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে চোখে পড়ে শীতের প্রকোপের সাথে সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ৩০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪০ জন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১১টা বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৩৫জন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩টা বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৭জন। যেটা বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।
সিভিল সার্জন ডা: শেখ সুফিয়ান রুস্থম বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। এই ঠান্ডার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, শিশু ডায়রিয়া বেড়েই চলেছে। আমারা ঠান্ডার কথা মাথায় রেখেই বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক আছি। বিগত ২৪ ঘন্টায় সমগ্র জেলায় ভর্তি হয়েছে ১৫জন শিশু এবং শীতের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত সহ¯্রাধীক বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই শীতে শিশুদের প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঠান্ডা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র জানান, তীব্র শীতে অসহায় দুস্থদের মাঝে ৪৪ হাজার ১০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬শত এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে ২ হাজার ২শত। স্টকে আছে ৩শত কম্বল। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া বলেন, আমরা ৭ হাজার ৩০০ কম্বল পেয়েছিলাম। প্রচন্ড শীতের জন্য অসহায় মানুষের কথা ভেবে সবগুলো কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করেছি। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, অনেক আগেই বরাদ্দকৃত কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করেছি। জেলা পরিষদ সূত্র জানান, এবছরের বরাদ্দকৃত কম্বল এখনো পাওযা যায়নি। পাওয়া মাত্রই দুস্থ অসহায়দের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা হবে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, মধ্যে তারা কমিশনারদের মাধ্যমে দুস্থ অসহায় মানুষের মধ্যে এক হাজার কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করেছেন এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থায়নে/উদ্যোগে ১২৫০টা কম্বল কেনা হয়েছে। যেটি আসছে রবিবার বিতরণ করা হবে। তিনি সবাইকে আহবান জানান যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সেটা দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
সাতক্ষীরা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ জানিয়েছে, জেলাতে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তিনি শীত বস্ত্র বিতরণে শীতার্তদের পাশে বিত্তÍবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গরিব, দুস্থ ও অসহায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।

 

 

 

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।