বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির সুনাম ছিল একসময়। কিন্তু করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের চিংড়ি বাজার কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল। তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাতক্ষীরায় গলদা চিংড়ি চাষ রফতানি বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চলতি মৌসুমে এ জেলা উৎপাদিত গলদা চিংড়িতে ৭৭০ কোটি টাকা রফতানি আয় করেছে। একই সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে গত মৌসুমের তুলনায় এক হাজার টন। আগামীতে রফতানি ও উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুর গ্রামের গলদা চিংড়ি চাষী গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি এক দশক ধরে মিঠাপানির সাদা মাছের পাশাপাশি গলদা চিংড়ি উৎপাদন করেন। চলতি মৌসুমে ৩০ বিঘা জমির ঘেরে গলদা উৎপাদন করেন। জমির লিজ, রেণু পোনা ক্রয়, খাদ্য ও শ্রমিকের মজুরির টাকা উঠিয়েও ৮ লাখ টাকা লাভ হয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘গত মৌসুমেও একই পরিমাণ ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ করে ৬ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘বাগদা চিংড়ির তুলনায় গলদা চিংড়ি উৎপাদনে ঝুঁকি কম। তাছাড়া এর গ্রোথ বেশি, দামও ভালো পাওয়া যায়। যে কারণে আগামীতে আরো বড় পরিসরে গলদা চাষ করব।’
তবে চাষীরা গলদা চিংড়ি উৎপাদনে তাদের কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেছেন। তারা জানান, গলদার রেণু পোনা সংগ্রহে অনেক জটিলতা রয়েছে। নদী বা সুন্দরবন থেকে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। তাছাড়া কিছু পোনা অবৈধ উপায়ে ভারত থেকে আসে। এছাড়া সামান্য কিছু পোনা আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। এসব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় গলদা রেণু পোনা অপ্রতুল। এ সংকট সমাধানে চাষীরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ চিংড়ি চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাতক্ষীরার বিশিষ্ট ঘের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাবলা জানান, রফতানিতে বাগদার পাশাপাশি গলদা চিংড়িতেও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে সাতক্ষীরায়। তবে গলদার রেণু পোনা সংগ্রহে অনেক জটিলতা রয়েছে। গলদা উৎপাদন বাড়াতে হলে এর রেণু পোনা উৎপাদনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আগামীতে পোনা সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বণিক বার্তাকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর পরিমাণ ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ হয়, যা গত মৌসুমের তুলনায় দুই হাজার হেক্টর বেশি।
তিনি আরো জানান, এ পরিমাণ ঘেরে গলদা উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার টন। যার আনুমানিক রফতানি বাজারমূল্য ৭৭০ কোটি টাকা। গত মৌসুমে জেলায় গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয় ১০ হাজার টন। সে তুলনায় চলতি মৌসুমে গলদা চিংড়ি উৎপাদন বেড়েছে এক হাজার টন।