সাতক্ষীরায় আম গাছে ধরছে আগাম জাতের মুকুল

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: ফাল্গুগুনের আগেই মধুমাসের আগমনী বার্ত নিয়ে সাতক্ষীরায় হাজারো গাছে আগাম জাতের আমের সোনালী মুকুল আসতে শুরু করেছে। মাঘের মধ্যেও বসন্তের আগমনে আমগাছের শাখাগুলো ভরে গেছে উজ্জ্বল সোনালী মুকুলে, যেন আকাশের বুকে ডানা মেলে দিয়েছে গাছগুলো। চারদিকে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে অসংখ্য আমবাগান। আর এ মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মনকে করে তুলছে আরো প্রাণবন্ত । বাতাসে মুকুলের ম-ম সুবাস বইছে। গাছে আসা আমের মুকুল থেকে গুটি গুটি আম যাতে ঝরে না পড়ে, সে জন্য রাতদিন গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পারকরছে আম চাষি ও বাগান কর্মচারীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং আশানুরূপ ফলন হলে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জানা গেছে, এবার জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানিও করা যাবে। প্রতি গাছে যেভাবে আম ঝুলছে, তাতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগে বলছে এবছর জেলাতে প্রায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নার্সারি পর্যায়ে আম চারা উৎপাদন একটি ব্যবসায়, কৃষক পর্যায়ে আম চাষ লাভজনক কৃষি পণ্য, ব্যবসায়ী পর্যায়ে মৌসুমি ব্যবসায় হিসেবে বিবেচিত হলেও আমকে শিল্পের পর্যায়ে ভাবা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে যে পরিমাণ কোমল পানীয়, বিদেশি জুস, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি আমদানি করা হয়; আমকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে তা পণ্যে রূপান্তর করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব। বিশেজ্ঞরা বলছে যদি দেশে এ জাতীয় পণ্য রপ্তানি করতে না হয় তাহলেই তো দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দেশেই থাকতো; তদুপরি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফলে দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তন ঘটতো। ফল বিশেজ্ঞরা বলছে, অর্থনৈতিক দিক থেকে আমের অবদান কোনো অংশে কম নয়, আন্তর্জাতিক মানের এই ফলটি শুধু পুষ্টি ও স্বাদের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মাঘের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে বাগানের গাছগুলোর যতœ নিতে পরিশ্রম শুরুকরে দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই আবহাওয়াগত ও জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরুকরেছে। জেলার বিখ্যাত উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে আগাম জাতের আম অন্যতম। স্বাদ ও গন্ধের কারণে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এ জেলার আম। এজন্য বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে অনেক আমবাগান। বিগত ৯ বছর আগে থেকে এ জেলার আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি শুরুহয়েছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ ও বেড়েছে। মধ্য মাঘে আমের আগাম এই মুকুল আমচাষিদের মনে জাগিয়েছে আশার আলো। এ অঞ্চলের আমের মধ্যে প্রসিদ্ধ গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ প্রায় শতাধিক জাতের আম।
সাতক্ষীরা সদরের দহাকুলা গ্রামের আম বাগান মালিক নুরুল ইসলাম জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আম গাছে আগাম মুকুল এসেছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করছি। চলতি বছর জেলাতে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে প্রায় ১৪ হাজার আম চাষি বাগান পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর ১২৩৫ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭১৫ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮২৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৮০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৪৫ হেক্টর, শ্যামনগর উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগানে আম উৎপাদিত এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলার কৃষি বিভাগ। চাষিরা জানান, আমচাষের জেলা রাজশাহী হলেও সুস্বাদু আমের জেলা হিসেবে সাতক্ষীরার সুনাম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে বিস্তার লাভ করেছে। দেশব্যাপী সাতক্ষীরার আমের চাহিদা থাকায় নতুন নতুন উদ্যোগতা উন্নত জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.মো: জামাল উদ্দীন জানান বলেন, শুধু সাতক্ষীরা জেলায় পাঁচ হাজারেরও বেশি বাগানে আম চাষ হয়ে থাকে। এসব বাগানে চাষি রয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার জন। আমগাছে আগাম মুকুল আসায় চাষিদের বিভিন্ন বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
 

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।