রাজশাহীতে সাহায্য করার কথা বলে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ,

রাজশাহীতে সাহায্য করার কথা বলে এক নারীকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে তিন নারীসহ চারজনকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের চন্দ্রিমা থানার ভদ্রা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। একই সময় ভুক্তভোগী নারীকে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে র‍্যাব।

আটক ব্যক্তিরা হলেন নগরের হেতেম খাঁ এলাকার মো. আলমগীর রয়েল (৪০), তাঁর স্ত্রী হেলেনা খাতুন (৩০) এবং দুই শ্যালিকা দিলারা বেগম (৩৫) ও মমতাজ বেগম (৪২)। তাঁদের আটকের পর আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় র‍্যাবের রাজশাহী সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস।

র‍্যাবের দাবি, স্ত্রী ও শ্যালিকাদের সহযোগিতায় ভুক্তভোগী নারীকে ধর্ষণ করেন আলমগীর। হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করতে ওই নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আলমগীরের স্ত্রী ও শ্যালিকারা। অভিযানে আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল তিনটি স্ট্যাম্প, পাঁচটি মুঠোফোন, চারটি সিম, তিনটি চেক বই ও দুটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, গত বুধবার দুপুরে কেনাকাটার উদ্দেশে রাজশাহী কোর্ট স্টেশন এলাকায় যান ভুক্তভোগী নারী। কেনাকাটার একপর্যায়ে ওই নারীর মুঠোফোনটি খোয়া যায়। তিনি সেখানে মুঠোফোনটি খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তখন কিছুটা পরিচিত আলমগীরের সঙ্গে ওই নারীর দেখা হয়। মুঠোফোন উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে আলমগীর তাঁকে অটোরিকশায় ভদ্রা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই আলমগীরের স্ত্রী ও শ্যালিকারা উপস্থিত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, আলমগীর স্ত্রী ও শ্যালিকাদের সহযোগিতায় ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। তখন তিন নারী গোপনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন। পরে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তিনটি ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং তাঁকে ওই বাসায় আটকে রাখেন। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে র‍্যাব। র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অপরাধ স্বীকার করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

রাজশাহীতে সাহায্যপ্রার্থী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। শুক্রবার র‍্যাবের রাজশাহী সদর দপ্তরে
রাজশাহীতে সাহায্যপ্রার্থী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন। শুক্রবার র‍্যাবের রাজশাহী সদর দপ্তরেছবি: প্রথম আলো

র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক বলেন, চক্রের মূল হোতা আলমগীর একজন প্রতারক। তিনি স্ত্রী ও শ্যালিকাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দীর্ঘ দিন নারী-পুরুষকে প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে ভাড়া বাড়িতে নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ করতেন। গোপনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করতেন। আলমগীরের বিরুদ্ধে আগেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, চক্রটি বিধবা বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া নারীদের টার্গেট করে। বিভিন্ন পরিবহনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নানা ধরনের প্রলোভন দেখায়। পরে তাঁদের বাসাবাড়িতে নিয়ে অনৈতিক কাজের ভিডিও ধারণ করে। এ জন্য বাসাবাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আটক চারজনের বিরুদ্ধে নগরের চন্দ্রিমা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Please follow and like us:

Check Also

কারফিউর সময় ঢাকার রাস্তায় ‘ইউএন’ লেখা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমনের জন্য কারফিউ জারির পর ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল দেবার সময় ইউএন (ইউনাইটেড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।