আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: ১০ কোটি ব্যয়ে পুনঃখননকৃত সাতক্ষীরা প্রাণসায়ের খালটি পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের একটি অংশের বাড়ি, দোকানপাট ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা ও মৃত জীবজন্তুর মরদেহ খালে ফেলা হচ্ছে। খালের পানি পচে কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে। দুর্গন্ধে খালের দুই ধারের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের টেকা দায় হয়ে পড়েছে। খালের পূর্ব পাশের সড়ক দিয়ে মানুষের নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়। নাগরিকের মতে, নানা অনিয়মের কারণে খাল পুনঃখননে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে খননকাজ বন্ধ হয়ে আছে। অন্যদিকে খননকৃত প্রাণসায়ের খালটি আবারো আগের রূপে ফিরে গেছে। প্রাণসায়ের খালে এখন শহরবাসীর নিক্ষিপ্ত বর্জ্য ও কচুরিপানায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বদ্ধ পানি ও বর্জ্যে শহরের পরিবেশ মারাত্মক দূষণ হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে বহমান খালটির নাম প্রাণসায়ের। এই প্রাণসায়ের খাল ঘিরে গড়ে উঠেছিল একসময় সাতক্ষীরা শহর। স্থানীয় লোকজন জানান, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন। মরিচ্চাপ নদের সঙ্গে বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করা হয়। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খাল। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণসায়ের খাল।
সাতক্ষীরা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজ বলেন, খালটির মরিচ্চাপ নদের মুখে এলারচর ও বেতনা নদীর মুখে খেজুরডাঙ্গীতে নব্বই দশকে দুটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এতে খালটি স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে থাকে। জলকপাট দুটি পরবর্তী সময়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খালের জোয়ার–ভাটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের জুনে খননকাজ শেষ হওয়া খালটি দেড় বছর যেতে না যেতেই আবার ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে বদ্ধ খালটিতে ফেলা হচ্ছে শহরের আবর্জনা।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকার ১০ কোটি ব্যয়ে সাতক্ষীরা প্রাণসায়ের খালটি পুনঃখনন শুরু করে ২০২০ সালে। কিন্তু শুরু থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সাভাবে খনন করে। সে সময় সাতক্ষীরায় নাগরিকদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও মিছিল সমাবেশও করা হয়। কিন্ত কোনো ফল হয়নি। ৫৫-৬০ শতাংশ পুনঃখনন করার পর ২০২১ সালে অজ্ঞাত কারণে প্রাণসায়ের খননকাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত আর খনন হলো না প্রাণসায়ের খালটি। এতে সরকারের ৯-১০ কোটি টাকা অপচয় হলো। প্রাণসায়ের খননে কোনো কাজে লাগলো না। অন্যদিকে দুই মুখে বাঁধ দেয়ায় প্রাণসায়ের খালে জমে থাকা বদ্ধ পানিতে শহরবাসী ও সুলতানপুর বড় বাজারের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্রাণসায়ের খালের পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হলে দুর্গন্ধে পথচারীদের মুখে রুমাল দিতে হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের দিকে প্রবল স্রোত বন্ধ করে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে খালের এল্লারচর ও খেজুরডাঙ্গায় স্লুইসগেট নির্মাণ করে পাউবো। পরবর্তী সময়ে স্লুইসগেট দুটি অকেজো হয়ে গেলে খালের পাশ দিয়ে কেটে সেখান থেকে পানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পানির প্রবাহ আর আগের জায়গা না আসায় খালটি আস্তে আস্তে মৃত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খালটি খনন করে আবার সচল করার চেষ্টা করা হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে খালটি পুনঃখনন শেষ হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এটি ভরাট হতে শুরু করে। বর্তমানে এ খালে পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে, সে জন্য বারবার বলা হচ্ছে। তিনি নিজে গিয়ে বড়বাজারে ব্যবসায়ীদের বলে এসেছেন। তারপরও খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে পারছেন না। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, প্রাণসায়ের খালপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদারদের নোটিশ করে নিষেধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে খাল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবু সাইদ বিশ^াস
সাতক্ষীরা
১১/২/২৪
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …