সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভাগীয় তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহা. আব্দুল গনির বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের গাছ কেটে অর্থ আত্মসাত থেকে শুরু করে প্লিপের টাকা ভাগবাটোয়ারাসহ স্কুলের সীমানা প্রাচির বিক্রি নিয়েও নানা অভিযোগ এই শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। এছাড়া শিক্ষক হয়রানীর অভিযোগ তো রয়েছে হরহামেশাই। সম্প্রতি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে ওই শিক্ষককে চরম হয়রানীর শিকার এবং তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

সূত্রমতে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ও গাছ বিক্রি করে অর্থ ভাগাভাগির অভিযোগের খবর স্থানীয়সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে।তারই রেশ কাটতে না কাটতে ফের শিক্ষা অফিসার মুহা. আব্দুল গনির বিরুদ্ধে নিলাম ব্যতীত গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এবারের ঘটনা ঘোনা কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
একাধিক সুত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর ঘোনা কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক টাকার গাছ ও পুরাতন সীমানা প্রাচীর বিক্রি করে অর্থ ভাগাভাগি করেছে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মো. নজরুল ইসলাম ও শিক্ষা অফিসার আবদুল গনি।এ ঘটনার পর শিক্ষক সমাজ একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। কারণ আবদুল গানির দুর্নীতিতে পূর্বে কোন সহকারী শিক্ষা অফিসার এমনভাবে প্রকাশ্যে মুহা.আবদুল গনির দুর্নীতির সঙ্গী হয়নি। এরফলে আবদুল গনির দুর্নীতি ও অনিয়মের হাত আরো শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলামের বন্ধু, ভাই ও আত্মীয় স্বজন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে চাকরি ও রাজনীতি করার সুবাদে তিনি নিয়মিত অফিস করেন না। সপ্তাহে ২/১দিন দুপুরের দিকে অফিসে এসে স্বাক্ষর করে চলে যান। যেটুকু সময় থাকে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে দাপটের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। শিক্ষা অফিসার তার সাথে তাল মিলিয়ে অফিস স্টাফ ও অফিসারদের শিক্ষকদের সামনে গালমন্দ ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। এরফলে অফিসে প্রত্যেকের ক্ষোভ থাকলেও প্রশাসন নিশ্চুপ থাকায় তারা অসহায়। সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলামের বিরদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নিলাম ব্যতীত গাছ ও ভবন বা অন্য কোন স্থাপনা বিক্রি অতীতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ঘটেনি। ২০২০ সাল হতে মুহা. আব্দুল গনির সুদীর্ঘ ৪ বছরের চাকরিকালে এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে বলেন সাধারণ শিক্ষকসহ অন্যান্যরা।

সাতক্ষীরা সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে সীমাহীন। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামাল এসব অবৈধ আয়ের ভাগ পেয়ে থাকেন। সাধারণ শিক্ষকরা এসব দূর্নীতিবাজ অফিসারদের বিরুদ্ধে হয়রনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা শিক্ষা অফিসারের অনিয়ম-দূর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহা. আবদুল গনির সামাহীন দুর্নীতির ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে।খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক প্রাথমিক কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত শিক্ষা বিষয়ক এক পত্রে তার বিরুদ্ধে তদন্তরে নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১.০০ ঘটিকায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এই তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে বলে সেই পত্রে উল্লেখ করেছেন।
ইতোপূর্বে মুহা. আবদুল গনির চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে শাস্তিমুলক বদলি করা হয়। কোন এক অজানা কারণে তা রদ করানো হয় বলে জানান সাধারণ শিক্ষকরা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহা.আবদুল গনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ হয়েছে কীনা আামার জানা নেই। সাধারণ শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহা: আবদুল গনির অপসারণের দাবি জানিয়ে বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছারিতার কারণে সাতক্ষীরা সদরের শিক্ষা অফিসার মুহা. আবদুল গনিকে বিচারের আওতায় আনা জরুরী। তাহলে শিক্ষা সমাজের উন্নয়ন হবে। স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরে আসবে সাতক্ষীরায়।

সাতক্ষীরা সদরের ঘোনা কাজীপাড়া প্রাইমারি স্কুলে এধান শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান বিদ্যালয়ের গাছ কাটার কথা অস্বীকার করেন। এসময় তাকে গাছ কাটার ছবি সম্পর্কে জানানো হলে বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। সাতক্ষীরা সদরের ঘোনা কাজিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাতক্ষীরা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ডা. আবুল কালাম বাবলার কাছে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল গনির বিরুদ্ধে জানতে চাইলে বিষয়টি আামার জানা নেই। তবে দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব বলে আশ্বাস দেন। সাতক্ষীরা সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামালের সাথে তার ব্যবহারিত মুঠোফোন বা সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।