খুলনার পাইকগাছায়: ঘুম ভেঙে যাওয়ায় গৃহবধূর চোখে-মুখে আঠা লাগিয়ে দেয় চোর: পুলিশ

খুলনার পাইকগাছায় এক গৃহবধূর (৪৫) চোখে-মুখে আঠা লাগিয়ে এবং হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পাইকগাছার পূর্ব কাশিম নগরের কপিলমুনি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম ইমামুল জোয়াদ্দার ওরফে এনামুল। তিনি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি, চুরিসহ নয়টি মামলা রয়েছে। এ নিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে গ্রেপ্তার তিনজন হলেন আবদুস সামাদ, সুমন হালদার ও রাশিদা বেগম। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার ইমামুলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, গত রোববার সন্ধ্যায় গৃহবধূর বাড়ির পাশের বাগানে ইমামুল নেশা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গৃহবধূকে একা বাড়িতে দেখে ঘরের সানশেড ধরে ছাদের উঠে সিঁড়ি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন। খাবারে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে চলে যান। পরে রাত দুইটার দিকে একইভাবে আবার ঘরে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তখন গৃহবধূর ঘুম ভেঙে গেলে তাঁর পকেটে থাকা আঠা বের করে গৃহবধূর চোখে ও মুখে লাগিয়ে দেন। গৃহবধূর সঙ্গে ইমামুলের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। গৃহবধূর গোঙানির শব্দে পাশের বাড়ি থেকে লোকজন সাড়া দিতে শুরু করলে ইমামুল গৃহবধূর কানের দুল ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জনানো হয়, লুট করা কানের দুলটি ইমামুলের মা রাশিদা বেগমের মাধ্যমে চুকনগর স্বর্ণ পট্টির মা জুয়েলার্স নামের একটি দোকানে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। যে কারণে ইমামুলের মা ও দোকানমালিক সুমন হালদারকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ইমামুল একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৯টি মামলা আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি তাজা গুলিসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গৃহবধূকে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেননি। গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কারও মস্তিষ্ক বিকৃত না হলে এমন নৃশংস কাজ করতে পারে না: চিকিৎসক

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় চোখের পাতা ও ঠোঁটে শক্ত আঠা লাগিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়। তবে মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রাতে বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা খোয়া যাওয়ার কথাও মামলায়  উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলা, স্বজন ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘরের মধ্যে ওই গৃহবধূর গোঙানির শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। পরে গৃহবধূকে ঘর থেকে হাত-পা বাঁধা ও চোখ-মুখ আঠা দিয়ে আটকানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তখন অচেতন ছিলেন। পরদিন সোমবার সকালে অচেতন অবস্থায় তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। ওই দিন রাতে গৃহবধূর চেতনা ফেরে। গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। দুপুরের দিকে কথা বলতে পারলেও সেদিন রাতে কী ঘটেছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। তিনি জানান, রাত ১০টার দিকে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পরে চেতনা ফিরে দেখেন হাসপাতালে আছেন।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।