দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর প্রথমবারের মতো এলাকায় ফেরার সময় পথে পথে গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব, দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স. ম আলাউদ্দীন তনয়া লায়লা পারভীন সেজুঁতি। এসময় তিনি হাত নেড়ে জনতার ভালোবাসার জবাব দেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার পর সড়ক পথে তালার আঠারো মাইলে পৌঁছালে তাকে শুভেচ্ছা জানান মুক্তিযোদ্ধা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ সায়ীদ উদ্দীন, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা যুবলীগসহ হাজারো দলীয় নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা-প্রজন্ম।
বীরমুক্তিযোদ্ধা বিএম আব্দুর রাজ্জাক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ডা: আব্দুল বারী, বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. হাসানুজ্জামান, বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস সোবহান, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার, বীরমুক্তিযোদ্ধা মইনুর হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মল আলীসহ অনেক বীরমুক্তিযোদ্ধা লায়লা পারভীন সেজুঁতিকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের মেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর প্রথমবারের মতো এলাকায় ফিরছেন। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এখানে ১৮মাইল এলাকায় ছুটে এসেছি। আমাদের জীবনের বড় পাওয়া আলাউদ্দীন ভাইয়ের মেয়ে এমপি হচ্ছে। সে সংসদে যে আমাদের কথাগুলো তুলে ধরবে। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এসময় তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, তালা উপজেলার কৃতি সন্তান, আধুনিক সাতক্ষীরার রূপকার শহিদ স. ম আলাউদ্দীনের কন্যা লায়লা পারভীন সেঁজুতি মনোনয়ন পাওয়ায় জেলাবাসীর খুশির শেষ নেই। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। পরে তাকে নিয়ে কয়েক হাজার মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা সহকারে নগরঘাটার পথে রওনা হন নেতৃবৃন্দ।
পরে তাকে নিয়ে নগরঘাটার মিঠাবাড়িতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ স. ম আলাউদ্দীনের কবর জিয়ারতে অংশ নেন নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন আনসার আলী।
লায়লা পারভীন সেঁজুতিকে শুভেচ্ছা জানাতে মাইক্রো, পিকআপ, মোটরসাইকেল যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন।
তালা উপজেলার মিঠাবাড়িতে আসলে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও হাজারো জনতার ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। রাস্তায় দুই পাশে নারীরা তাদের মেয়েকে দেখার অপেক্ষায় করেন। কখন আসবে তাদের আদরের লায়লা পারভীন সেঁজুতি।
মিঠাবাড়ির ষাটোর্ধ্ব জেলেখা বিবি বলেন, সেঁজুতির বাবা বেঁচে থাকলে আমাদের এলাকার অনেক উন্নয়ন হতো। আমাদের মেয়ে সেঁজুতি এমপি হচ্ছে এতে পুরো এলাকার মানুষ খুশি। আমাদের এলাকার মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ হচ্ছে। সেঁজুতি তার বাবার স্বপ্ন পুরণ করবে।
নিজ এলাকার মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়ে আবেগ আল্পুত হন। এসময় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের চোখে আনন্দাশ্রু দেখা যায়।
সেখানে পৌছালে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এলাকার মা-বোনেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। এসময় তারা আনন্দে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।
বিকালে বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তাকে গণসংবর্ধনা প্রধান করা হয়।
বক্তব্য প্রদান করেন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ সাহিদ উদ্দীন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দীন, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার।
এসময় ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা যুব লীগের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নগরঘাটা কবি নজরুল বিদ্যাপীঠ, ধানদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মিঠাবাড়ি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তালা উপজেরা মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতীলীগ, যুবলীগ, সরুলিয়া যুবলীগ তালা উপজেলা শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী বৃন্দ, সরুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুল হাই, কুমিরা চেয়ারম্যান শেখ আজিজুর, কুমিরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, পাটকেলঘাটা প্রেসক্লাব, তালা উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী হোসনেয়ারা, নগরঘাটা ইউনিয়নবাসীর পক্ষে সাংবাদিক মো. জাবের হোসেন।
গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, আপনাদের ভালোবাসা দেখে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক, পারিবারিক অভিভাবকসহ আপনারা যার আজকে উপস্থিত হয়ে ভালোবাসা দেখিয়েছেন সেজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আপনাদের এই ভালোবাসার ঋণ কিভাবে শোধ করবো। আমার বাবার প্রতি আপনাদের যে ভালোবাসা আজও অটুট আছে। সেই ঋণ শোধ হবার না। বাবার হত্যার পর থেকে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। যড়যন্ত্রকারীরা আজও বসে নেই। ২৮ বছর বাবার হত্যার বিচার পাইনি। আমার বাবাকে আপনারা ভুলেননি এই জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞত। আমার পিতার সম্মান রাখতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়ে মানুষের সেবার করার সুয়োগ দিয়েছেন। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ ও কৃতাজ্ঞতা জানাচ্ছি।
পরে সন্ধ্যায় খুলনা রোড মোড়স্থ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন লায়লা পারভীন সেঁজুতি।
পরে তিনি কাটিয়া বাবার বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে দেখা করেন। সেখানে থেকে পত্রদূতের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি প্রয়াত আনিসুর রহিমের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে আনিসুর রহিমের স্ত্রী ড. দিলার বেগমের সাথে দেখা করেন। সর্বশেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলারে বাড়িতে যান। তিনি বাড়িতে না থাকায় তার সহধর্মীনি সালেহা ইসলামের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে এবং দোয়া নেন।
প্রসঙ্গত, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সর্বকনিষ্ঠ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ স. ম আলাউদ্দীনের কন্যা এবং সাতক্ষীরায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আন্দোলন সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী লায়লা পারভীন সেজুঁতি পিতার পথ ধরেই তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে দিন-রাত ছুটে চলেন জেলার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
’৭৫ পরবর্তীতে বিএনপির শাসনামলে সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধুর নামে প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল ও কলেজ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদ স. ম আলাউদ্দীন যে অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন, তারই পথ ধরে সাতক্ষীরায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ ও আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী ও জনবান্ধব সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে বাবার পথ অনুসরণ করেই এগিয়ে যাচ্ছেন লায়লা পারভীন সেজুঁতি। patradoot