গত আট বছরে মেয়ে শিশু ও নারীদের খতনা করানোর সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমটি জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানায়, বিশ্বে প্রায় ২৩ কোটি নারী খতনা করানোর পর বেঁচে আছেন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০ কোটি।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানান, কম বয়সী নারীদের খতনা করানোর প্রবণতা বেশি।
তিনি বলেন, ‘নারীদের যৌনাঙ্গ কেটে ফেললে তাঁদের দেহের ক্ষতি হয়। এটি তাঁদের ভবিষ্যতকেও হুমকির মুখে ফেলে। এই ক্ষতিকর অভ্যাসের অবসান ঘটাতে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’
নারীদের খতনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা।
ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বজুড়ে নারীদের খতনা করানো না হলেও যেসব দেশে খতনা করানো হয় সেসব দেশে মেয়ে শিশুর জন্মহার বেড়েছে। জাতিসংঘ চাইছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে নারী খৎনার বিষয়টি নির্মূল করতে। আর এ জন্য তারা যে গতিতে কাজ করছে তার চেয়ে ২৭ গুণ দ্রুত করতে হবে।
জাতিসংঘ বলছে, নারীদের যৌনাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ২০১২ সালে এটি নিষিদ্ধ করে একটি রেজ্যুলেশনও পাস হয়।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ৬০ শতাংশ নারীদের খতনাই হয় আফ্রিকায়। সেখানে ১৪ কোটি ৪০ লাখ নারীর খতনা করানো হয়েছে। এরপর বেশি নারীদের খতনা করানো এশিয়াতে। এই মহাদেশে ৮ কোটি নারীর খতনা করানো হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যেও ৬০ লাখ নারীর খতনা করান রয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়া, গিনি,জিবুতি,মিসর, সুদান ও মালিতে সবচেয়ে বেশি নারীদের খতনা করানো হয়। এসব দেশে যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো সমস্যার কারণে নারীদের জন্য কোনো কর্মসূচি সফল করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
এরমধ্যে কিছু আফ্রিকান দেশে গত কয়েক দশকে নারীদের খতনা করানোর চর্চা থেকে বেরিয়েছে। তবে মোট সংখ্যা বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের খতনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।
অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খতনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়।
যদিও পরিছন্নতার বা স্বাস্থ্যগত কোন সুবিধা নেই, কিন্তু এ ধরণের রীতিতে অভ্যস্ত সমাজগুলোর মানুষেরা মনে করেন, যেসব মেয়েদের এরকম খতনা করা হয়নি, তারা তারা অস্বাস্থ্যকর, অপরিছন্ন বা গুরুত্বহীন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি করা হয় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস আচরণ।
নারী খতনা নির্মূলে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ফাইভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নিমকো আলী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি এ ঘটনার ভুক্তভোগী। আমি জানি নারীদের ওপর এর প্রভাব কী। এই সংখ্যা বাড়তে থাকার বিষয়টিতে আমি হতবাক বিশেষ করে যখন আমরা জানি কী কাজ করে আমরা এটিকে প্রতিরোধ করতে পারতাম।’