আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের সমানতালে কাজ করে ও ন্যার্য মজুরি পাচ্ছে না সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার নারী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙ্গনসহ স্থানীয় ভাবে কাজের পরিধী সিমীত হয়ে আসায় গত কয়েক বছর ধরে এ ঞ্চলের পুরুষেরা পেশা পরিবর্তন করে অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। কৃজের পাশাপাশি পশুপালন, বনায়ন, মৎস্য, ক্ষদ্র ও বৃহৎশিল্পের সঙ্গেও জড়িত তারা। ফসলের বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এমন কি বিপণন পর্যন্ত বেশিরভাগ কাজ উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা এককভাবেই করে আসছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বাংলাদেশ শ্রমশক্তি বিষয়ক এক জরিপ বলছে, কৃষি অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীর অবদান ৬৪.৪ শতাংশ এবং পুরুষের অবদান ৫২.৮ শতাংশ। যেখানে কৃৃষিতে নারীর অংশ গ্রহণ বেড়েছে ১০২ শতাংশ ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মতে বর্তমানে জেলাতে মোট জনসংখ্যা ২৩,১৭,১৫৮ জন। যেখানে ২০১১ সালের জরিপে সাতক্ষীরা জেলা মোট জনসংখ্যা ছিল ১৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ৩ হাজার ১৮২ জন এবং পুরুষের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৭৭৭ জন। এাদেও মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ নারী বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম বিক্রি করে থাকেন। কর্মক্ষত্র আর মজুরির পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাসহ পারিবারিকভাবেও এ জনপদেও এসব নারী বৈষম্যের শিকার বহয়ে থাকেন বলে অভিযোগ।
‘আমরা নারী বলে কথা, নারী হয়ে জন্ম নেওয়াটায় যেন আমাদের আপরাধ, সমানতালে কাজ করে ও পুরুষদের অর্ধেক মজুরি পাচ্ছি। আবার দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করার নিয়ম থাকলেও প্রায়ই আধা কিংবা এক ঘণ্টা বেশি কাজ করিয়ে নেন মালিকরা। কথা গুলো বলছিলে দুই সন্তানের জননী ছমিরন।
নারীরা আজও অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার দাবি করে তালা এলাকার করিমন জানান, কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে রান্না করতে হয়েছে। স্কুল থেকে দুই সন্তান ও কাজ থেকে ফেরা দিনমজুর স্বামীকে দুপুরের খাবার দিয়ে গৃহস্থালির কাজ গোছাতে বিকেল গড়িয়েছে। হাড়ভাঙা এমন পরিশ্রমের পরও পরিবারে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ার অভিযোগ তার।
পঞ্চম শ্রেণি পাস এ নারী বলেন, ‘যদি লেখাপড়া শিখতি পারতাম, তবে হয়তোবা ছোটখাটো চাকরি করলি স্বামী বা শ্বশুরগো মন রাখতি গে এত খাটতি হতো না। ‘উপকূলীয় এ জনপদের নারীদেরপ্রায় সবারই দাবি, তারা অনেক বেশি অবহেলা এবং বঞ্চনার শিকার। মজুরি বৈষম্যের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তাদের। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ গ্রামের রোকেয়া বেগমসহ কয়েক নারী শ্রমিক জানান, তারা পুরুষের সমান কাজ করে এক বেলার জন্য ২০০ টাকা পাচ্ছেন। অথচ পুরুষরা ৩০০ টাকা পাচ্ছেন।
ফসল উৎপাদনের ২১টি ধাপের ১৭টিতেই নারীর সরাসরি অংশ গ্রহণ রয়েছে। উপকূল জনপদেও এসব নারী-অবহেলা, বৈষম্য আর নির্যাতনের শিকার ভাগ্য বিড়ম্বিত এক জীবন। যে জীবনে সংকট নিত্যদিনের, নেই সমাধান। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারের বোঝা চাপে নারীর ওপর। পুরুষবিহীন সংসারে নারী হয়ে ওঠেন পরিবারেরপ্রধান। অথচ কোথাও নেই এতটুকু স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ সংবিধানে ২৮নং অনুচ্ছেদে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। কৃষিতে নারীর অংশ গ্রহণের ফলে একদিকে যেমন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ছে, অন্যদিকে মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিশেজ্ঞরা বলেন, কৃষি খাতকে গতিশীল করতে হলে গ্রামিণ কৃষানিদেও প্রযুক্তি গত প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে হবে, যাতে তারা সহজেই কৃষিসংক্রান্ত তথ্য মোবাইলের মাধ্যমে পেতে পারেন। প্রণোদনা হিসেবে কৃষক কার্ডের মাধ্যমে সরকারের সহায়তা নিয়ে তা সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারলেই নারীরা কৃৃষিতে নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারবেন। নারী কৃষকের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সময়ের দাবী।
এদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জলবায়ু সংকটে বিপন্ন উপকূলীয় গ্রামীণ নারীদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারীরা ‘উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি চাই’, ‘কোনো কাজ ছোট নয়, নারী পুরুষের সমতা চাই’, ‘সমমজুরী নীতিমালা বাস্তবায়ন চাই’, ‘বৈষম্য নয় সকল ক্ষেত্রে সমতা চাই’, ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক সবার খাবার একই হোক’, ‘গণপরিবহনে নারী আসন নিশ্চিত করুন’ ‘স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে লবণ পানি মুক্ত কাজ চাই’, ‘জলবায়ু সংকটে বিপন্ন মানুষের জীবন রক্ষা করুন’প্রভৃতি স্লোগান সম্বলিত প্লাকাডর্ প্রদর্শন করেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, ‘আগে নারীদের মজুরি নিয়ে অনেক সমস্যা ছিল। সরকারের বিভিন্ন সচেতনামূলক কার্যক্রমের কারণে এটি অনেকাংশে কমেছে। এছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিসহ সম-অধিকারপ্রতিষ্ঠায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারী অধিকার ও মজুরি বৈষম্য কমাতে আইন করেছে। সর্বনিম্ন মজুরি হবে ৪০০ টাকা। এখানে নারী-পুরুষ কোনও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে নারীর মজুরি বৈষম্য দূর হবে।
![](https://crimebarta.com/wp-content/uploads/2024/03/0-1-1-660x330.jpg)