রাতারাতি খাল শুকিয়ে আ.লীগ নেতাকর্মীরদের মাছ শিকার, প্রশাসন নির্বিকার

সিংড়ার চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রের মৎস্য অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত তিশিখালী খালে মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে। রাতারাতি শ্যালো ও বৈদ্যুতিক জলমোটর দিয়ে শুকিয়ে এ মাছ শিকারে নেমেছেন ডাহিয়া গ্রামের সাবেক যুবলীগ নেতা হযরত আলী ও আওয়ামী লীগ কর্মী কামাল হোসেন ওরফে কাঞ্চনসহ একশ্রেণির প্রভাবশালী মৎস্য শিকারি।

সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা, পানির গতি প্রবাহ স্বাভাবিক ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ কৃষিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক গত তিন অর্থবছরে সিংড়ার চলনবিলে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫৪ কিলোমিটার বিভিন্ন খাল খনন করা হয়। আর এ খনন করা খালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি খালের নাম তিশিখালী।

এ খালটির ৫.৯০ কিলোমিটার অংশ পুনর্খনন কাজে ব্যয় করা হয় এক কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার সাত টাকা। আর খালটি পুনর্খননের ফলে হিজলী, সাতপুকুরিয়া, নদীমারী, বোয়ালমারী, পুকুরপাড়, শষ্ঠিবিঘা, নুরপুর, কাদোগাড়ী, ডাহিয়া, মহেশচন্দ্রপুর এবং কালিনগর-এ ১১টি বিলের প্রায় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশন ও স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পাবে কৃষক। কিন্তু শুক্রবার সকাল ৯টায় সরেজমিন গিয়ে এ খালে দেখা যায় তার উলটো চিত্র, খালের মূল অংশ মৎস্য অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত মাজার এলাকা শুকিয়ে ৩০-৩৫ জন লোক মাছ শিকার করছেন। উপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তদারকি ও নির্দেশনা দিচ্ছেন ডাহিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী কামাল হোসেন ওরফে কাঞ্চন। আর খাল পাড়ে বসে বসে সাধারণ কৃষক ও মৎস্যজীবীরা করছেন হাহুতাশ। সেখানে তিশিখালী মাজারে বসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০ জন কৃষকের মুখের ভাষ্য, সিংড়ার চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ করে বোরো ধান ও ভুট্টা জমিতে স্বল্প খরচে সেচ ব্যবস্থা। কিন্তু এ খালের পানি কৃষককে ব্যবহার করতে ও মাছ ধরতে দেওয়া হয় না। শুনেছি নামমাত্র মূল্যে খালটি কেনাবেচা হয়েছে। অথচ এ খালে প্রায় কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে খাল শুকিয়ে মাছ শিকারের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ কর্মী কামাল হোসেন ওরফে কাঞ্চন বলেন, ‘তিশিখালী খালটি ডাহিয়া ও সাতপুকুরিয়া গ্রামের দুটি মসজিদ থেকে তিনি ও তার পার্টনার হযরত আলী সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কিনেছেন। তাই তারা শুকিয়ে মাছ শিকার করছেন।

সরকারি খাল শুকিয়ে এভাবে তো মাছ ধরা অপরাধ। আর এ কাজে জড়িত থাকায় তো মামলার আসামি হয়েও আবার কীভাবে খাল শুকাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতের বারান্দায় যাওয়ার আগেই তাদের জামিন হয়ে গেছে। আর মামলায় সর্বোচ্চ না হয় পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হবে বলে তিনি হাসতে থাকেন এবং এ প্রতিবেদককেও কেনার চেষ্টা করেন। আর ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম বলেন, খননকৃত খালগুলো কৃষি ও কৃষকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে অর্থদণ্ডসহ পর পর তিনটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১২-১৩ জনকে আসামি আর বাকি দুটি মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে একটি মামলায় হযরত আলী ১নং আসামি এবং আরেকটি মামলায় কামাল হোসেন ওরফে কাঞ্চন ৫নং আসামি ছিলেন। কিন্তু তারা জামিনে এসে এবার রাতারাতি খাল শুকিয়ে মাছ শিকারে মেতেছেন বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি লিখিতভাবে ইউএনও এবং থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।