জেলার শীর্ষ শিক্ষাদস্যু প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল গনির বিরুদ্ধে দুর্নীতি পাহাড়!

জস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহা. আবদুল গনি জেলার শীর্ষ শিক্ষাদস্যু হিসেবে একেরপর এক দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। দুর্নীতিতে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছেন এই কর্মকর্তা। তার মদদদাতা ও কুমন্ত্রদানকারী অফিসার দুর্নীতির দায়ে গত সপ্তাহে বদলির পর সাতক্ষীরা নিকটবর্তী একটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে পরামর্শক্রমে দুর্নীতি পরিচালনা করা হচ্ছে। পূর্বে দুর্নীতি করলে জবাবদিহিতার জন্য আগে থেকে কোন প্রিকশান নেওয়া হতো না। আর এখন দুর্নীতি করে সেটা ঢেকে দেওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি রাখা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ সূত্রটি জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মিরপুর, ঢাকা থেকে ০১ ফ্রেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে “৩৮.০১.০০০০.৪০০.১৯.০০২.২৩.১৩/১(২)” সংখ্যক স্মারক মোতাবেক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সাতক্ষীরা কার্যালয়ের ৫ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখের “৩৮.০১.৮৭০০.০০০.৩৭.০০৩.২২-১৯২/৮” সংখ্যক মোতাবেক “পুল ও প্যানেল হতে নিয়োগকৃত এবং ৭(খ)ধারায় পদায়নকৃত সহকারী শিক্ষকগণ যারা নিজ উপজেলা/জেলার বাইরে কর্মরত আছেন এরূপ শিক্ষকের তথ্য প্রেরণ।” বিষয়ক শিরোণামে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহা. আবদুল গনি কর্তৃক ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রি: স্বাক্ষরিত “উশিঅ/সদর/সাত/২০২৪/১৭১” সংখ্যক স্মারক মোতাবেক তথ্য প্রেরণ করা হয়। তার প্রেরিত তথ্য হতে দেখা যায় পুল ও প্যানেল হতে নিয়োগকৃত সহকারী শিক্ষক ৬জন এবং ৭(খ) ধারায় নিয়োগ/পদায়নকৃত সহকারী শিক্ষক ৭জন সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় কর্মরত আছেন। এরপর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ৮ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত “উশিঅ/সদর/সাত/২০২৪/১৭১” সংশোধিত লিখে পত্র জারি করেন এবং সেই আলোকে পুল প্যানেলে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ২৮জন দেখানো হয়েছে। যে ১৩জনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল তন্মধ্যে সিলভার জুবিলী মডেল স: প্রা: বিদ্যালয়ের নাছরিন নাহার, মো. মহসিন আলী সহকারি শিক্ষকদ্বয়ের নাম রয়েছে। এছাড়া পূর্নিমা রানী রায়, সহকারি শিক্ষক, ভবানী সপ্রাবি হতে কালিগঞ্জের রায়পুর সপ্রাবিতে ডিপিএড প্রশিক্ষণে থাকাকালীন নীতিমালা লঙ্ঘন করে বদলি করা হয়েছে এই পুল প্যানেলের শিক্ষককে অথচ তার স্থায়ী ঠিকানা দেবহাটা উপজেলায়। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তথ্য গোপনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে এখন সেইসব শিক্ষকদের বাড়ি ধর্ণা দিচ্ছেন আবদুল গনি। মুখ খুললে তাদের বিরুদ্ধে নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুমকি ধামকিও প্রদর্শন করা হচ্ছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা হচ্ছে, এটিইও বাসুদেব ও রবিউলকে তাড়িয়ে দিয়েছি, বেলালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে শ্রীঘ্রই তাকে সাসপেন্ড করা হবে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে ২বার তদন্ত হয়েছে প্রমাণিত হলেও কোন কিছুই হয়নি আর হবেও না। ২বার বদলি করা হয়েছে তবু আছি। বাকিটা বুঝে নেন। আশা করি মুখ খুলবেন না। আপনারদের পাশে আছি এবং থাকবো। সদর্পে এসব বয়ান দেন আবদুল গনি। শিক্ষকগণ সত্যিই চরম অসহায় ও নির্বাক। এর পূর্বে আবদুল গনির বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৮ মে “৩৮.০১.৮৭০০.২৭.০০৮.১৭-৭২০” সংখ্যক মোতাবেক শিক্ষক বদলিতে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য (প্রমাণিত হয়), নিলাম ছাড়া স্কুলের ভবন ও গাছ বিক্রি, এডুকেশন ইমাজের্ন্সির টাকা আত্মসাৎ, সরকারি বরাদ্দ ছাড়ের নামে উৎকোচ গ্রহণ, সমাপনীর উত্তরপত্র বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ, জাতীয় দিবসে অনুপস্থিত (প্রমাণিত হয়), শিক্ষার গুণগত মান ক্ষুন্ন করা, দুটি সরকারি মোটরসাইকেল ব্যবহার (প্রমাণিত হয়), স্কুলে ও শিক্ষকের বাসায় দাওয়াত খাওয়া, অহেতুক হয়রানি, বিনা কারণে শোকজ নোটিশ প্রদান, দালাল শ্রেণির শিক্ষকদের সাথে বিশেষ সখ্যতাসহ মোট ১২টি বিষয়ের দুর্নীতি ও অনিয়মের উপর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী। গত ২১ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে ৩টি বিষয় তদন্তে প্রমাণিত লিখলেও তিনি আবদুল গনির বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোন সুপারিশ করেননি। টাকার বিনিময়ে দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে পরবর্তীতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে “৩৮.০১.৪৭০০.০০০.৯৯.০০২.২১-৩১৫/৫” সংখ্যক মোতাবেক শেখ অহিদুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, খুলনা কর্তৃক ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।শিক্ষকদের মধ্যে ধারনা রয়েছে যে,পৃথিবীতে এমন কোন মোহ নেই যে, শেখ অহিদুল আলমকে বশ করতে পারে তবে তদন্তের একমাস পরেও কোন অজানা কারণে কেন আবদুল গনির বিরুদ্ধে কোন ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না সেটা বোধগম্য নয়। এদিকে, নির্বাচনকালীন ভোটকেন্দ্র বিশেষ মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। শিক্ষা অফিসার আবদুল গনির দুর্নীতির দোসর মাসুম বিল্লাহ সহকারী শিক্ষা অফিসার তার যোগরাজপুর ক্লাস্টারের ৮টি বিদ্যালয়ের ৭টিতে ২লক্ষ এবং মুকুন্দপুর স্কুলে ১লক্ষ ৫০হাজার বরাদ্দ প্রদান করার জন্য চাহিদা দেন। ৭টি বিদ্যালয় হতে ৫০হাজার করে দেওয়ার চুক্তিতে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এটাতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি মাসুম বিল্লাহ সে শিক্ষা অফিসার আবদুল গনির জন্য ৭টি বিদ্যালয় হতে আবার ২০হাজার করে উত্তোলন করে অর্থ আবদুল গনির সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এভাবে যোগরাজপুর ক্লাস্টারের ৭টি স্কুলে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। এছাড়াও যারা আবদুল গনিকে ক্যাশ দিতে টাকা নেই মর্মে জানায় তাদেরকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্যাশ চেক প্রদান করে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষককে টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে আবদুল গনিকে উৎকোচের টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তা বলেন ক্যাশ চেক দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ক্রস চেক দিতে হবে অন্যথায় আবদুল গনি তার দায় এড়াতে পারেন না।
এছাড়াও সাতক্ষীরা সদরের শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষক প্রতি ৩০০টাকা করে উত্তোলন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ৩বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত থাকা শিক্ষা অফিসার মোহা. আবদুল গনিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের হিজলায় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ করা হলেও কোন এক অজানা ক্ষমতার জোরে আবদুল গনি তার বদলি ঠেকিয়ে সাতক্ষীরা সদরে থেকে যান অথচ তার স্ত্রী ভোলারহাট চাপাইনবাবগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকুরিরত আছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিক্ষক সমাজ সাতক্ষীরা-০২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সকল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। আইনানুগ ব্যবস্থার ম্যাধ্যমে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করেন।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।