দীর্ঘ ৯ বছর পর কোনো বাধা ছাড়াই রাজধানীতে বড় পরিসরে ইফতার মাহফিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে এ ইফতার আয়োজন করে দলটি। শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে এক ডজনের বেশি বিএনপি নেতা যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন।জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এতে অংশ নেন।
ইফতারের আগে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিনা সংগ্রামে মুক্তি আসে না। এ জাতিকে মুক্তির জন্য আরেকটিবার বুক সটান করে দাঁড়াতে হবে।দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকেরা রাজনীতি করার অধিকার রাখলে দেশের সব নাগরিক সাংবিধানিকভাবে সে অধিকার রাখে।
দীর্ঘদিন পর আয়োজিত জামায়াতের এ ইফতারে বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতা অংশ নেন। বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস। উপস্থিত ছিলেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জহির উদ্দিন স্বপন, অপর্ণা রায়, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, নজরুল ইসলাম ও বিএনপির মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান।
এর আগে গত ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর লেডিস ক্লাবে বিএনপির ইফতার মাহফিল রাজনৈতিক মিলনমেলায় পরিণত হয়। যেখানে দীর্ঘদিন পর এক টেবিলে দেখা যায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের। সেই ইফতারে আমিরসহ জামায়াতের চারজন সিনিয়র নেতা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সবশেষ ২০১৫ সালের ২৫ জুন রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছিল জামায়াত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেই ইফতারে অংশ নিয়েছিলেন। ইফতার শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালেও সে সময় কোনো বক্তব্য দেননি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সকল বাধা ও শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে হলে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। বিনা সংগ্রামে কখনো মুক্তি আসে না। মুক্তি অর্জন করতে হলে অবশ্যই সংগ্রাম করতে হবে।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
মাহফিলে আগত মেহমানদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সকলের মঙ্গল কামনা করি। সকল রকম হঠকারিতা ও বিশৃঙ্খলা পরিহার করতে হবে। পায়ে পারা দিয়ে কেউ ঝগড়া করতে আসলে অবশ্যই তার জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকদের যদি রাজনীতি করার অধিকার থাকে, তাহলে দেশের প্রতিটি নাগরিকেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে। শুধু আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং দোয়া করতে হবে আল্লাহ যেন আমাদের সকল বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেন। ইফতারের পূর্ব মূহূর্তে তিনি মাহফিলে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তিনি যেন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল বাধা-বন্ধন থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। আমাদের দেশের আলেম সমাজ যেন আমাদের দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন সেজন্য আল্লাহ যেন তাদের যোগ্যতা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার তাওফিক দান করুন। আজকে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর যে জুলুন-নিপীড়ন চলছে, আল্লাহ যেন তা থেকে তাদেরকে মুক্তি দেন এবং তাদের বিজয় দান করেন। তিনি দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত শেষ করেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে বিগত আটটি বছর আমরা সকলে মিলে ইফতার মাহফিলের সুযোগ পাইনি। আজকের ইফতার আয়োজন নিয়েও প্রতিকূলতা ছিল। হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জামায়াতের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল আয়োজন করতে পেরে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমাদের দাওয়াতে এ ইফতার মাহফিলে যারা শামিল হয়েছেন, আমি তাদের সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়ার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।