আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমি রাজনীতি করি- এজন্য বুয়েটে যেতে পারব না? এটা কোন ধরনের আইন? এটা কোন ধরনের নিয়ম? তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে অপরাজনীতি ও জঙ্গিবাদের কারখানায় পরিণত করা হলে সরকার অ্যাকশনে যাবে।
রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব অপকর্ম, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই নীতিতে আমরা এগিয়ে চলছি। বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার করতে গিয়ে আমাদের অনেক কর্মী দণ্ডিত হয়েছে। বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে আমরা কাউকে ছাড় দিইনি। শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা বিভিন্ন জন, কেউ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলেন আবার কেউ বলেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে। সেই পাকিস্তানি আমলের প্রচারণা, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইয়ুব খান যে ভাষায় কথা বলতেন, সে ভাষায়। নতুন করে বিএনপি সেই ভাষায় কথা বলছেন। তাদের কোনো ইস্যু নেই। সব ইস্যু মার খেয়েছে। ভোট ও আন্দোলনে পরাজিত হয়েছে। এখন তাদের ইস্যু ভারতবিরোধিতা। এন্টি ইন্ডিয়া ফোবিয়া।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতা ছেড়ে যায়, তখন বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। আর তারা এখন আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কটাক্ষ করে। রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে রেমিট্যান্স বাড়ছে, রিজার্ভও বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। না জেনেই তারা মিথ্যাচার করছে, অপপ্রচার করছে। তাদের আমাদের জবাব দিতে হবে।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জীবন দিয়ে বাঙালির বীর সন্তানরা দেশের স্বাধীনতা এনেছেন। অথচ ৫৩ বছর পরও বিতর্ক চলছে- কে স্বাধীনতার ঘোষক। এত বছরেও এ সমস্যার সমাধান হলো না। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু ১২টা বছর কারাগার থেকে কারাগারে থেকেছেন, নিপীড়ন, ফাঁসির মঞ্চে স্বাধীনতার জয়গান গেয়েছেন। পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ড হয়ে গিয়েছিল- জেলখানার মধ্যেই কবর তৈরি করা হয়েছিল। নিজের জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি স্ত্রী-পুত্রের খোঁজ নেননি, কারণ তার হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশ, চেতনায় ছিল বাংলাদেশ। অথচ তাকে নিয়ে ৫৩ বছর পরও বিতর্ক, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক। এ বিতর্কের বিষয়ে জবাবটা মোটা দাগে আমরা অনেক সময় বলার চেষ্টা করেছি। এখন আমরা বলি- ঘোষণার পাঠক কখনোই ঘোষক হতে পারেন না। পারলে তো এমএ হান্নান, আবুল কাসেমরাও তো স্বাধীনতার ঘোষক। পাঠক তো ঘোষক নন। তার চেয়ে বড় কথা ঘোষণার অধিকার কার ছিল? সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার অধিকার আর কারও ছিল না।
তিনি বলেন, একাত্তরের পর পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছিল? যারা ঘটিয়েছিলেন, তাদের অনুসারীরা আজ ঘোষক নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন। তাদের টার্গেট যে কোনোভাবে বঙ্গবন্ধুকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়া।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন। কেউ ক্ষমতার দাপট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। যার নির্বাচন করার ইচ্ছা তিনি করবেন। নির্বাচন করার স্বাধীনতা সবারই আছে। এমপি, মন্ত্রীরা হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকলে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করার যে উদ্দেশ্য, তা সার্থক হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচিত করবে। নির্বাচন কমিশনও স্বাধীন। অনিয়ম হলে তারা ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, চায়ের দোকানে বসে নেতারা দলের বিরুদ্ধে কথা বলেন। কিন্তু এ ধরনের আচরণ নেতাদের পরিহার করতে হবে। সবাইকে খুব দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। একেকজনের একেক রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা দলকে সংকটের দিকে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগে গঠনতন্ত্র আছে, নিয়মনীতি আছে, নেতৃত্ব আছে, আমরা কেন আদর্শচ্যুত হব?
দলের চট্টগ্রাম বিভাগের মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সভাপতিত্ব করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য আনিসুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা-মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টায় শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় বৈঠক চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। বৈঠকে থাকা একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৃণমূল থেকে আসা অধিকাংশ নেতা স্থানীয় রাজনীতির সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে স্ব স্ব এলাকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি দ্রুত করার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর অনেকটাই অগোছালো। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে চাঙা করতে হবে।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নিজ জেলার রাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরেন। কুমিল্লার কোন্দল সামনে আনেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন।