বন বিভাগের অভিযানে অনেকে নৌকা, ট্রলারসহ ধরা পড়েন। এসব জব্দ করা নৌকা ও ট্রলার রাখা হয় বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে। অযত্ন ও অবহেলায় দিনের পর দিন পড়ে থেকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে জব্দ করা অন্তত দুই হাজার ছোট-বড় নৌকা ও ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব নৌযান রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা দ্রুত নিলাম দেওয়ার উদ্যোগ নেই বন বিভাগের।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে ২৪ মার্চ গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের পেছন থেকে চুন নদ পর্যন্ত আবার সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে কয়েক শ ছোট-বড় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিতভাবে পড়ে রয়েছে। সেখানে থাকা লোকজন বলেন, এসব নৌকা কিংবা ট্রলারের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। কোনোটা নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বেশির ভাগ নৌকা ও ট্রলার ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের জেলে জামাল মোল্যা জানান, ছোট একটি ডিঙি তৈরি করতে বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাঝারি সাইজের একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, বড় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কবাদক স্টেশন রয়েছে। এসব চারটি স্টেশনের আওতাধীন বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের আওতায় কলাগাছিয়া, কাঠেরশ্বর, পুষ্পকাটি ও মান্দারবাড়িয়া, কদমলার আওতাধীন মুন্সিগঞ্জ, চুনকুড়ি, নটাবেঁকি ও হলদেবুনিয়া, কৈখালী স্টেশনের আওতাধীন টেংরাখালী, মরগাং ও কাঁচিকাটা এবং কবাদক স্টেশনের আওতায় দেবেকি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। ১২টি টহল ফাঁড়ির মধ্যে রয়েছে ৪টি অভয়ারণ্য।
সুন্দরবনে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে কাজ করেন সুন্দরবনসংলগ্ন গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনিমুখো গ্রামের রহমত আলী গাজী (৫৫)। তিনি বলেন, অধিক লাভের আশায় কিছুসংখ্যক জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল চুরি করে সুন্দরবনে ঢোকেন। অধিকাংশ জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল গরিব। মালিকবিহীন নৌকাগুলো নিলামে দিলে অনেক টাকার রাজস্ব আয় হতো। অপর দিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেসব নৌকার মালিক রয়েছেন, ওই সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা না গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে মালিকদের ফেরত দেওয়া যেতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণ হলে ওই সব নৌকা নষ্ট হতো না।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা নূরুল আলম বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদী থেকে বিভিন্ন সময় জব্দ করার পর ৪টি স্টেশন কিংবা ১২টি টহল ফাঁড়িতে নৌকা ও ট্রলার রাখা হয়। সাধারণত একটি নৌকা বা ট্রলার চার-পাঁচ মাস খোলা আকাশের নিচে এক স্থানে থাকলে এর কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রলারের ইঞ্জিনও লোনাপানিতে বিকল হয়ে যায়।
নূরুল আলম আরও বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান তাঁদের কাছে নেই। তবে এসব স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে বর্তমানে দুই-তিন হাজার নৌকা ও ট্রলার জব্দ রয়েছে। কোনো কোনো মামলা পাঁচ-ছয় বছর ধরে চলে। তত দিনে নৌকা কিংবা ট্রলার মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আর মালিকবিহীন নৌকার নিলাম দিতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। যখন অনুমতি মেলে এর আগে নৌকা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নিলাম দেওয়ার সুযোগ থাকে না কিংবা দিলে কেউ অংশগ্রহণ করেন না। সব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।