সিএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক প্রাণসায়ের খালের সকল অবকাঠামো অপসারণে বেলার নোটিশ

প্রাণসায়ের খালের দুই প্রান্তে (চরবাথিলায় এবং খেজুরডাঙ্গায়) অবস্থিত জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণপূর্বক খালের মূল প্রবাহ নিশ্চিত করতে সিএস জরিপ (ক্ষেত্রবিশেষে আরএস) অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক খালের প্রবাহ বিঘœকারী সকল অবকাঠামো অপসারণ করে এর যথাযথ সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়ে আইনী নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলা-এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না নোটিশের মাধ্যমে কার্যকরী প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ১৭ এপ্রিল তিনি রেজিষ্ট্রিকৃত ডাকযোগে ১২জনকে ওই নোটিশ পাঠিয়েছেন। তারা হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, দেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর-খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, সাতক্ষীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র, সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং পরিবেশ অধিদপ্তর-সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের উপরিচালক।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সাতক্ষীরা শহর এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে প্রাণসায়ের খাল। খালটি কাটিয়া মৌজার আরএস ২৩৪০ দাগে অবস্থিত। সাতক্ষীরার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগকারী এ খালের দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার। খালটি বেতনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে শহরের আপার প্রান্ত (উজানে) থেকে আগত খেজুরডাঙ্গা খালের সাথে শহরের থানাঘাটা নামক স্থানে মিলিত হয়ে নাম অপরিবর্তিত রেখে মরিচ্চাপ নদীতে পতিত হয়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশনে অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এ খাল। বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ খাল হিসেবে এ খালের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এ খালের অবদান ছিল অপরিসীম। দেশের অন্যান্য নদী-খালের মতো দখল ও দূষণে এ খালের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালটি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ঘর-বাড়িসহ নানাঅবৈধ স্থাপনা। ১১নং নোটিশ গ্রহীতা ২০১৯ সালে ৮২০জন অবৈধ দখলদার এবং ১৬৮টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করলেও অদ্যাবধি দখলমুক্ত হয়নি প্রাণসায়ের খাল।
নোটিশে আরও বল হয়, দখলের পাশাপাশি খালটির দু’পাশে এবং খালের মধ্যে পলিথিন-প্লাষ্টিকসহ নানান অপচনশীল ও ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলে খালটির পানি দূষিত করছে। সাতক্ষীরা বাজারের অননুমোদিত কসাইখানার মাধ্যমে গবাদি পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য সরাসরি খালটিতে ফেলা হচ্ছে। ১২নং নোটিশ গ্রহীতার তথ্য অনুসারে বাজার ও পাশর্^বর্তী আবাসিক এলাকার ড্রেনের সংযোগ রয়েছে এ খালে। গৃহস্থালী বর্জ্য নিয়মিত এ খালে ফেলা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে খালটি তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট হারিয়ে একটি পঁচা ডোবায় পরিণত হয়েছে। প্রাণসায়ের খালের আপস্ট্রীমে (উজান প্রান্তে) খেজুরডাঙ্গা খালে একটি জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় এবং খালের শেষ প্রান্তে চরবালিথা নামক স্থানে আরেকটি অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর কারণে এ খালের পানি বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীতে প্রবাহিত হতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে উল্লেখিত এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬নং নোটিশ গ্রহীতা প্রাণসায়ের খালের দুই প্রান্তে (চরবাথিলায় এবং খেজুরডাঙ্গায়) অবস্থিত জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণের প্রস্তাব করেন। উল্লেখিত খালদখল ও দূষণমুক্ত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে বারবার আবেদন জানান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হতে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে এলাকাবাসী খাল রক্ষায় আইনি সহযোগিতা পেতে বেলা’র নিকট আবেদন জানায়। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বেলা প্রতিনিধি খালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী খাল দূষণ ও দখলমুক্ত রেখে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আপনার দায়িত্ব যা পালনে আপনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলাধীন সাতক্ষীরা সদর উপজেলাস্থ কাটিয়া মৌজার আরএস ২৩৪০ দাগে অবস্থিত প্রাণসায়ের খালের তালিকাভুক্ত ও তালিকা বর্হিভূত (যদি থাকে) অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জোর দাবি জানাচ্ছে। একইসাথে এ খাল দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। সেইসাথে প্রাণসায়ের খালের দুই প্রান্তে (চরবাথিলায় এবং খেজুরডাঙ্গায়) অবস্থিত জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণপূর্বক খালের মূল প্রবাহ নিশ্চিত করতে সিএস জরিপ (ক্ষেত্রবিশেষে আরএস) অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক খালের প্রবাহ বিঘœকারী সকল অবকাঠামো অপসারণ করে এর যথাযথ সংরক্ষণের অনুরোধ জানাচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রেরণের ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস. হাসানুল বান্নাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে বলা হয়।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।