সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামরবাড়ি) তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় হেক্টর প্রতি হাইব্রিড ও উফশী ৪.২২ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলায় ৭৯ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ৯৬ হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন, কলারোয়া উপজেলায় ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ৫২ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন, তালা উপজেলায় ২০ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন, দেবহাটা উপজেলায় ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন, আশাশুনি উপজেলায় ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন ও শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের প্রণোদনার দুটি প্যাকেজে জেলার প্রায় ৪ লাখ কৃষকের মধ্যে উফশীতে ২০ হাজার ও হাইব্রিডে ১৪ হাজার কৃষকের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে কৃষক প্রতি উফশীতে ৫ কেজি বীজ ও সার এবং হাইব্রিডে ২ কেজি বীজ বিতরণ করা হয়। চাষের শুরু থেকেই আবহাওয়া সম্পূর্ন অনুকূলে থাকায় বারো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচে ২২ থেকে ২৪ মণ ধান পাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কৃষকরা।
অপরদিকে তীব্র গরমে শ্রমিক সংকট থাকায় দ্বিগুন মুজুরি দিয়ে কুষকদের ধান কাটতে হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও সমান তালে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে। সাতক্ষীরার মূল শ্রমিকের এক তৃতীয়াংশ এখন ধান কাটায় নিয়োজিত। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড়গুন অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি ভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২টাকা কেজি। তবে সবচেয়ে বেশি বাম্পার ফলন হয়েছে সদর উপজেলায়। এখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া ২০-৩০ হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ করেছে কৃষকরা। উৎপাদিত ধান থেকে চাল উৎপাদন হবে ৯৭ হাজার ২৭৭ মে. টন।
সদর উপজেলার ধুলিহার এলাকার কৃষক ইউনুচ আলী জানান, প্রায় ১০বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ করেছেন। গতবারের তুলনায় ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। কয়েকদিন আগে থেকে তিনি ধান কাটা শুরু করেছেন। তীব্র গরম থাকায় শ্রমিকদের বেশি মুজুরি দিয়ে ধান কাটছেন। গরমে শ্রমিকরা ধান কাটাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। এমন বৈরী আবহায়ায় যে কোন সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দিতে পারে। যে কারণে তিনি আগে ভাগেই ধান কেটে ঘরে তুলছেন বলে জানান।
সদর ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্লাপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবছর ১৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছে। তার ১৬ বিঘাতে জমিতে চাষাবাদে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। তিনি প্রথম গত ৬ এপ্রিল জেলায় ইরি ধান কাটা শুরু করেছে। তার বিঘা প্রতি ২৮/২৯ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে।
তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, জামাল মোড়ল জানান, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। ফলে এবার কোনো জমি অনাবাদি থাকেনি। সরকার বিনামূল্যে আমাদের সার বীজ দিয়েছে। পুরো বোরো মৌসুম জুড়ে বড় কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায়, আবহাওয়া সম্পূর্ন চাষের অনুকূলে থাকায় এবং ধানের রোগবালাই কম থাকায় সাতক্ষীরায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সদর বালিথা গ্রামের ইউপি সদস্য আরশাদ আলী জানান, তিনি ২বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ধান ঘরে তুলেছেন। ২ বিঘা জমিতে ৬০মণ ধান উৎপাদন হয়েছে।
কলারোয়া কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, ফলন বাম্পার হয়েছে। কিন্তু তীব্র গরমে শ্রমিক সংকট দেখা গেছে। সাতক্ষীরার শ্রমিকরা জেলায় বাইরে গিয়ে মুজুরি বেশি নিয়ে ধান কাটছে। সে কারণে সাতক্ষীরা শ্রমিকদের বেশি মুজুরি দিয়ে ধান কাটা লাগছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ সরবরাহ করেছে। সাতক্ষীরার কোনো উপজেলায় অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায়, নিচু আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে না থাকার কারণে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বোরো চাষের ভরা মৌসুমেও নিচু জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে জলাবদ্ধতায় আবাদি জমি অনাবাদি থেকে যায়। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলাবদ্ধতা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বোরো চাষের ওপর জোর দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন ধান/চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আশা করা যাচ্ছে এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে। ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত বড় ধরনের কোন প্রাকৃতি দুর্যোগ না হলে গত মৌসুমের চেয়ে এবার কৃষকরা লাভবান হবে।