বাজারে আসছে সাতক্ষীরার আম: আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় দাম বেশি

২৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
এবারও বিদেশ যাবে সাতক্ষীরার আম

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ গুনে, মানে, পুষ্টিতে ভরপুর, বিশ্বমুক্ত গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাইসহ সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির দেশি আম মধুমাস জ্যৈষ্ঠ আসার অগেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে। যার প্রধান যোগান দাতা সাতক্ষীরা জেলা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে ৯ মে (বৃহস্পতিবার) থেকে সাতক্ষীরার আম আনুষ্ঠানিক ভাবে আম পাড়া শুরু শুরু করেছেন চাষিরা। তাদের দাবি, এবারে আশানুরূপ ফলন পাননি তাঁরা। ভৌগোলিক কারণে দেশে প্রথম আম পাকে সাতক্ষীরায়। তাই মৌসুমের প্রথম আম পেতে অপেক্ষায় থাকেন আম প্রেমীরা। জলায় এবার ২৫০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সবমিলে ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ চাষি রয়েছেন। জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর রপ্তানি হয় সাতক্ষীরা জেলার আম। সব মিলিয়ে এবার আম থেকে ২৫০ কোটি টাকার বেশি আয় হবে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৬৮ হাজার ৮১৯ মেট্রিক টন। বিক্রি থেকে আয় হয় ২৫৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
(৯মে) বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে সদর উপজেলা কুখরালীর আম চাষীর মোকছেদ মোড়লের আম বাগানে আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন জেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমদের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপপরিচালক ইকবল আহমেদ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মনির হোসেনে,উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ইয়াসির আরাফাত, সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী সহ আরো অনেকে। তবে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এক সপ্তাহ এগিয়ে ৯মে গোপালভোগ, বোম্বাই, গোপালখাস, বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম। ১১ মে গোবিন্দভোগ, ২২মে হিমসাগর, ন্যাংড়া আম ২৯ মে, আমরুপালি আম ১০ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের আড়তদার নুরুজ্জামান বলেন, সাতক্ষীরার আম বিশ্ববিখ্যাত, এ জেলার আম বিদেশে রপ্তানি হয়। তবে এবছর আবহাওয়ার কারণে অনেক আম ঝরে গেছে। এখন যা আছে তা খুবই কম। গতবারের তুলনায় এ বছর আমের দাম একটু বেশি যাবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের বাজার প্রস্তুত হয়ে গেছে আম বিক্রির জন্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারাও আসা শুরু করেছেন। আমচাষি মিজানুর রহমান বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। ৫০টি আম গাছ লাগানো। এবার ২৫টি গাছে কিছু আম হয়েছে। বাকিগুলোতে তেমন আম হয়নি। তাপমাত্রার কারণে অর্ধেক গাছে আম হয়েছে, অর্ধেক গাছে হয়নি। এবার আমাদের মনে হয় পুঁজি থাকবে না।

উপজেলা কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পরিপক্ব হয়। এজন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরুহয়। এরইমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা আসা শুরু করেছেন। যারা আম ব্যবসায়ী ও চাষি রয়েছেন তাদেরকে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি সাতক্ষীরার আমের যে সুনাম রয়েছে সেই সুনাম ধরে রাখবেন। কোনো রাসায়নিক মিশ্রিত আম যাতে বাজারজাত না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি বাংলাদেশসহ বিদেশি মানুষের সাতক্ষীরার ভালো আম খাওয়াতে পারব।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সাতক্ষীরার হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া ও আ¤্রাপালি আম স্বাদে-গুণেমানে অনন্য। এই বিশেষত্ব কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানি শুরুহয়। জানা যায়, সাতক্ষীরা থেকে ২০১৫ সালে ২১ টন, ২০১৬ সালে ২৩ টন, ২০১৭ সালে ৩২ টন, ২০১৮ সালে ১৯ দশমিক ৫ টন, ২০১৯ সালে ১ টন, ২০২১ সালে ১১ দশমিক ৩৬ টন, ২০২২ সালে ২১ টন ও ২০২৩ সালে ১৫৩ টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়। এসব আমের অধিকাংশই রপ্তানি হয়েছে ইতালি, ফ্রান্স, হংকং, যুক্তরাজ্য ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলার ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। দেশীয় চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। সাইফুল ইসলাম আরও জানান, যদিও প্রতিকূল আবহাওয়া ছিল। ন্যাচারাল সিলেকশন বলে একটি কথা রয়েছে, এ কারণে আম কম হলেও আমের সাইজ বড় হয়েছে। আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। স্থানীয় জাত গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপঘাস, বৈশাখীসহ আরও কয়েকটি প্রজাতির আম দিয়ে ৯ তারিখ থেকে আমাদের জেলায় আম সংগ্রহ শুরুহবে। পর্যায়ক্রমে ১১ মে গোবিন্দভোগ, ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ল্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রাপালি আম সংগ্রহ হবে। এই আমের যদি পরিপক্বতার নির্দেশক অনুযায়ী কৃষকরা আম সংগ্রহ করে তাহলে তারা যেমন লাভবান হবে, আমরাও তেমনি পরিপুষ্ট ও ভালো আম খেয়ে পরিতৃপ্ত হব। সাতক্ষীরায় আমের ক্যালেন্ডার ঘোষিত হয়েছে। আগামীতে যারা আম বিদেশে নেওয়ার জন্য আগ্রহী এমন ক্রেতা আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে জানাতে পারব। আশা করছি বিদেশে কিছু হলেও আম রপ্তানি হবে।

Please follow and like us:

Check Also

নিঃস্ব সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষ: ভূক্তভোগীরা জানতে চান, এভাবে চলবে আর কতদিন?

উপকূলের ভয়ংক্তার মে আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: উপকূলের ভয়ংক্তার মে। মে মাস মানেই উপকূল বাসীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।