সাতক্ষীরায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি কুরবানির পশু: দাম নিয়ে শঙ্কা

ভারত নির্ভরশীলতা কমিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চমক
আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ কুরবানি ঈদকে ঘিরে লোকসানের শঙ্কায় জেলার কয়েক হাজার পশু খামারি। চাহিদার বিপরীতে মজুত বেশি ও গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুমোটাতাজাকরণে ব্যয় বাড়ায় অন্যবারের তুলনায় এবার লাভ কম হবার আশংকা করছেন তারা। খামারিরা বলছেন, কুরবানির পশু পালনে তাদের লাভ কম হচ্ছে। যে কারণে জেলাতে হ্রাশ পাচ্ছে কুরবানির পশু পালন। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে ২০২২ সালে জেলাতে কারবানির জন্য প্রস্তুক করা হয়ে ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯৮টি পশু। সেখানে ২০২৪ সালে প্রস্তুত করা হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৬৬০টি পশু। অর্থাৎ দুই বছরে কুরবানির পশু পালন হ্রাস পেয়েছে ৬,৩৩৮ টি । তবে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, এ বছর জেলায় চাহিদার চেয়েও ১৩ হাজার ৯১৩টি কুরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলা গুলোতেও সরবরাহ করা হবে।
বিশেজ্ঞরা বলছে, ভারত নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চমক দেখিয়েছে এখানকার খামারিরা। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এখন গরু পালন করছে। কুরবানীতে পশু বিক্রয়ের মাধ্যমে বছরের বৃহৎ অংশ জুড়ে ‘পরিবারিক অর্থনীতি’ সমৃদ্ধ শালী হচ্ছে তারা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে স্বয়ংসম্পূণ অর্জন করেছে এখানকার খামারিরা। কয়েক বছর আগেও এখানকার গোশতের চাহিদার বড় অংশ মিটত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গুরু আমদানি করে। বর্তমানে সে চিত্র আর নেই। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। এতেই বাজারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে গবাদিপশুর লালনপালন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়তে শুরু করে। যার প্রতিফলন পড়েছে সীমান্তবর্তি জেলা সাতক্ষীরাতে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি বছর জেলায় ৯ হাজার ৯২৬ জন খামারি কোরবানি পশুর জন্য ৯৪ হাজার ৯১৩টি চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত করেছে এক লাখ ৮ হাজার ৬৬০টি পশু। অর্থাৎ ১৩ হাজার ৭৪৭টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। যা এই জেলা থেকে অন্য জেলায় পাঠানো যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামি কয়েক বছরে ঘুরে দাঁড়াবে। তবে চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে পারলে গ্রামীণ এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ শালী হবে। খামিরা বলছে “গরু বিক্রি থেকে খামারিরা একটা আয় পায়। সব খরচ বাদ দিয়েও একটি গরুতে অন্তত হাজার দশেক টাকা থাকে। গ্রামের একটি পরিবারের প্রতিদিনের যে প্রয়োজন সেটি অন্যান্য শস্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। কোরবানির পশু বিক্রি থেকে তারা একটি থোক টাকা পায়। এর মাধ্যমে তারা সারা বছর নগদ টাকার চাহিদার কিছু অংশ পূরণ করে।
সাতক্ষীরা সদরের তালতলা এলাকার গরুখামারি মোঃ আব্দুল কাদের জানান, একটি গরুর পেছনে যে অর্থ খরচ করা হচ্ছে, বিক্রি করে সেই তুলনায় লাভ করা যাচ্ছে না। এর কারণ হলো গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি। ১ লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু বর্তমানে ক্রেতারা ৭০-৮০ হাজার টাকায় কিনতে চাচ্ছে। তবে কোরবানির বাজার এখনো শুরুনা হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও একটু কম।
কোরবানির পশুর হাটগুলো পরিদর্শন ও খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের কোরবানির জন্য ক্রেতাদের চাহিদা সাধারণত মাঝারি সাইজের গরুর। অধিকাংশ ক্রেতাই কোরবানির জন্য ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে গরুক্রয় করেছেন। তবে ক্রেতারা বলছেন গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের গরুর মূল্য কিছুটা বেশি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: এস এম মাহবুবুর রহমান জানান, মোট আমিশের ৭৬ ভাগ আসে প্রাণি সম্পদ থেকে। জেলার পশু পলন থেকে সেই চাহিদা পুরণ করে। তিনি আরো জানান, জেলাতে উৎপাদিত পশু কুরবাণির চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। পাশা পাশি গত কয়েক বছর ধরে এখানকার চাষীরা দিন দিন গো-পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদে জেলার চাষীরা পশু বিক্রয় করে ভাল মুনাফা পাবে আশা জেলা প্রাণ সম্পদ কর্মকর্তার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, কুরবানি ঈদকে ঘিরে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চোরাই গরুদেশে প্রবেশ ঠেকাতে এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করে। আর হাটগুলোতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে।
 

 

Please follow and like us:

Check Also

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, বাংলাদেশিদের মৌলিক স্বাধীনতা চর্চার সক্ষমতা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা আরও একবার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ২০শে জুলাই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।