ভৈরবে র্যাবের হাতে আটক সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামে এক হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামনে থেকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ৭টায় তাকে ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সুরাইয়া খাতুন নান্দাইলের চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। সুরাইয়া, তার স্বামী ও ছেলে নান্দাইলে গৃহবধূ রেখা আক্তার হত্যা মামলার আসামি। রেখা সুরাইয়ার ছেলে তাইজুল ইসলামের স্ত্রী ছিলেন। তাইজুল বর্তমানে র্যাবের হাতে আটক।
জানা গেছে, দেড় বছর আগে একই উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখার সঙ্গে তাইজুলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাইজুল দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয় তাকে। পরে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে সে। এরই মধ্য রেখা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি নির্যাতন করে।
রাতেই তাকে ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার স্বামী ও শাশুড়ি লাশ রেখে পালিয়ে যায়। শ্বশুর আজিজুলকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুর) অভিযুক্ত করে মামলা করেন। আদালতের বিচারক শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। তদন্ত করছেন থানার এসআই নাজমুল হাসান।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এসআই নাজমুল হাসান সুরাইয়া ও তার স্বামী আজিজুলকে থানায় ডেকে আনেন। কিছুক্ষণ তাদের বসিয়ে রেখে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যেতে বলেন। এরপর থানার গেট থেকে সুরাইয়াকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের র্যাবের হাতে তুলে দিতেই এসআই নাজমুল হাসান থানায় ডেকে এনেছিল। র্যাব হেফাজতে নির্যাতনে আমার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করব। আমি বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১৪ ক্যাম্পের কমান্ডার ফাহিম ফয়সাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে সন্ধ্যা ৬টায় ময়মনসিংহের র্যাব কমান্ডার মো. মহিবুল ইসলাম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সুরাইয়া নান্দাইলের একটি হত্যা মামলার আসামি। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ও তার ছেলেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করা হয়। পরে ভৈরব ক্যাম্পে আনার পর গরমে অসুস্থ বা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সকালে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। ময়নাতদন্তে তা প্রমাণ হবে। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ সফিকুল ইসলাম জানান, সুরাইয়াকে কেন, কিভাবে, কী কারণে আটক করল এবং কিভাবে মারা গেল তার জবাব দেবেন র্যাব সদস্যরা।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, সকাল ৭টায় র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে আনার পর চিকিৎসক বিনিত দাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মূলত মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুল কালাম আজাদ মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, সুরাইয়া খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় ভৈরব থানা থেকে লিখিতভাবে আমাকে জানানোর পর আমি একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছি সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশকে সহযোগিতা করতে।