ট্র্যাপে ফেলে রাফায় ১৫ ইসরাইলী সেনাকে হত্যার দাবি হামাসের

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক বাহিনী-ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড গাজা উপত্যকার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় ১৫ জন ইসরাইলী সেনাকে হত্যার দাবি করেছে। বলা হয়েছে, ট্র্যাপে ফেলে রাফার একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসব দখলদার সেনাকে হত্যা করা হয়। হামাসের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, রাফা শহরের আল-তানুর এলাকার একটি বাড়িতে আগে থেকে বোমা পেতে রেখেছিল আল-কাসসাম ব্রিগেড। ইসরাইলী সেনারা বাড়িটিতে প্রবেশ করার পর সেটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামাসের সামরিক বাহিনী আরো বলেছে, বিস্ফোরণের পর প্রাণে বেঁচে যাওয়া ইসরাইলী সেনারা বাড়িটি থেকে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর গুলীবর্ষণ করেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। তবে রাফার ওই ঘটনার ব্যাপারে ইহুদিবাদী ইসরাইল এখনও কিছু জানায়নি। আল-জাজিরা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর প্রায় আট মাস ধরে গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। তবে এখন পর্যন্ত নিজের ঘোষিত একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি তেল আবিব।

ইসরাইলী হামলায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনী নিহত: গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে বিগত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর মধ্যে গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত ২০ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলী বিমান হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পূর্ব গাজার আল-দারাজ এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। একই অঞ্চলের একটি স্কুলে বোমা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এদিকে, গত শনিবার গাজায় ইসরাইলী হামলায় অন্তত ৬৪ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে ইসরাইলী বাহিনী। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজাজুড়ে হামলার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে ইসরাইলী বাহিনী। শনিবার তারা কমপক্ষে ৬৪ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের গেটে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনীদের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ জন নিহত ও আরও ২৫ জন আহত হয়েছেন।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে ফালুজাহতে পানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের ওপর ইসরাইল আর্টিলারি হামলা চালালে আটজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের একটি বাড়িতে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। উত্তর-পশ্চিম রাফাতে একটি গাড়িতে পৃথক হামলায় শনিবার আরও একজন নিহত হয়েছেন।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলী হামলা নিহত অন্তত ১৭: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ের নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ১৭ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরাইল বিমান হামলা চালানোর পর অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নুসেইরাতের একটি বাড়িতে ইসরাইলী হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। উত্তর গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী বিমান হামলায় অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনী নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। এদিকে গত শনিবার গাজায় ইসরাইলী হামলায় অন্তত ৬৪ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা বলছে, ইসরাইলী বাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে আক্রমণ আরও জোরদার করেছে এবং শনিবার কমপক্ষে ৬৪ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ২৮ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের গেটে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনীদের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং আরও ২৫ জন আহত হয়েছেন।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে ফালুজাহতে পানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো একদল লোকের ওপর ইসরাইল আর্টিলারি হামলা চালালে আটজন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের একটি বাড়িতে হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। খান ইউনিসের পূর্বে অবস্থিত আবাসান আল-কাবিরা শহরের আল-ফারহিন এলাকায় হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের একটি বাড়িতে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। উত্তর-পশ্চিম রাফাতে একটি গাড়িতে পৃথক হামলায় শনিবার আরও একজন নিহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলী এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলী আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলী এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। মূলত ইসরাইলী আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখ-ের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায়

ফের বাস্তুচ্যুত ৯ লাখ ফিলিস্তিনি

ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ স্থল ও বিমান হামলা তীব্র করার মধ্যে এক সপ্তাহে অন্তত ৯ লাখ ফিলিস্তিনি আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এর আশপাশে হানাদার বাহিনী ও হামাসের মধ্যে প্রচ- লড়াই চলছে। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফাহতেও লড়াই চলছে। এসব যুদ্ধে উভয় পক্ষ পরস্পরের বহু সেনা ও যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করেছে। ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজ হুমকি দিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার যুদ্ধোত্তর গাজার ব্যাপারে কোন পরিকল্পনা ৮ জুনের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে তিনি সরকার থেকে বেরিয়ে যাবেন। গাজায় প্রায় সাড়ে সাত মাস ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যায় অন্তত ৩৫,৩৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৯,৩৬৬ জন আহত হয়েছেন।

জাবালিয়া গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইল: ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থীশিবির গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইল। ঘরবাড়ি, মার্কেট, দোকানপাট ও রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে সব মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে ইসরাইলী ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান।

রাফার পাশাপাশি সম্প্রতি উত্তর গাজায় নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইলী বাহিনী। গত শুক্রবার সেখানে ইসরাইলী বাহিনী, হামাসসহ গাজার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক লড়াই হয় বলে জানা গেছে। গাজার ঐতিহাসিক আটটি শরণার্থীশিবিরের সবচেয়ে বড় জাবালিয়া শরণার্থীশিবির। বাসিন্দারা বলেন, জাবালিয়ার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছে ইসরাইলী সাঁজোয়া যান। সামনে অগ্রসর হওয়ার পথে সব বাড়িঘর ও দোকানপাট গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলী বুলডোজারগুলো।

পানি আনতে গিয়ে নিহত ৮: এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় বোতলে করে পানি সংগ্রহের সময় ইসরাইলী ট্যাংকের গোলাবর্ষণে নারীশিশুসহ অন্তত আট ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হন ১০ জন। আল-ফালুজা এলাকায় গতকাল এ হামলার ঘটনা ঘটে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা বাড়িঘর ছেড়ে ফালুজা এলাকায় আসি। এই এলাকাকে তুলনামূলক নিরাপদ মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ সেখানে গোলাবর্ষণ করে ইসরাইলী বাহিনী। কোথায় যাব আমরা জানি না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার ভিডিও যাচাই করে দেখে আল-জাজিরা। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর ঘটনাস্থলে অনেকটা স্রোতের মতো রক্ত বয়ে যায়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের বাড়িঘর ও দোকানপাট।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় আরও ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০৫ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর হামলায় ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৩৬৬ জন।

অস্থায়ী ঘাট দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ শুরু : গাজা নগরীর সমুদ্র উপকূলে স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ঘাট দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার ওই ঘাটে ৯০টি ট্রাকে ত্রাণ বোঝাই করা হয় বলে জানা গেছে।

৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর আগে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রবেশ করত। হামলা শুরুর পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে ইসরাইল। সর্বশেষ গাজার অন্যতম ক্রসিং মিসর সীমান্তবর্তী রাফা দখল করে নেয় ইসরাইলী বাহিনী। ত্রাণ প্রবেশে গাজা সীমান্তের ক্রসিংগুলো খুলে দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু এতে কর্ণপাত করছে না ইসরাইল সরকার।

Please follow and like us:

Check Also

টানা বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরাঃ ১০ লক্ষ মানুষ পানি বন্ধি

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রান্তনীতি, দুর্নীতি, লুটপাট ও ভারতের একতরফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।