সাতক্ষীরার বিখ্যাত সুমিষ্ট রসালো হিমসাগর আম এখন বাজারে, ফলন কম হওয়ায় দাম দ্বিগুণ

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরার সেই বিখ্যাত সুমিষ্ট রসালো হিমসাগর আম এখন বাজারে মিলছে। এই আম বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারসহ গোটা জেলা ফল পট্টিতে যেন উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ২২ মে জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়ানুযায়ী হিমসাগর আম সংগ্রহ করে সবার আগে বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করেন আম চাষিরা। আম চাষিরা লাভ লোকসানের হিসাব করে থাকেন এই হিমসাগর আমের ফলনের ওপর। চাষিরা বলছে এবার ফলন কম কিন্ত দাম বেশি পাওয়াতে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। সাতক্ষীরা হিমসাগর আম যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনি আশবিহীন রসালো সুমিষ্ট হওয়ায় এই আমের সুখ্যাতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। লোনা অঞ্চল হওয়ায় সাতক্ষীরার আম সুস্বাদু বলছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারক ও তাদের প্রতিনিধিরা সাতক্ষীরার বাগানগুলোতে হিমসাগর আমের কোয়ালিটিসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। কৃষিবিদদের মতে, ভৌগলিক অবস্থান ও আবহাওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য জেলার আগেই সাতক্ষীরায় আম গাছে মুকুল আসে। সে কারণেই সবার আগে আম পরিপক্ক হয়ে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। আর সাতক্ষীরার বিভিন্ন আমের মধ্যে সুমিষ্ট রসালো হিমসাগর আম অন্যতম। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের কাছে এই আমের চাহিদা সর্বাধিক। তাই আম চাষিরা হিমসাগর আম গাছগুলো বিশেষ পরিচর্যা নিয়ে থাকেন। ফলন কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম দ্বিগুণ বলছেন ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন দেখা যায়, শ্রেণিভেদে হিমসাগর আমের মান হিসেবে প্রতিমণ আম বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকায়।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারে গ্রাম থেকে আসছে শত শত ভ্যানভর্তি পাকা আম। বাগানের গাছ থেকে পেড়ে এসব আম এনে রাখা হচ্ছে আড়তে। সেখান থেকে আম কিনছেন ক্রেতারা। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এসব আম কিনতে আসছেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা। এসব ক্রেতা আবার অনলাইনের অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন সাধারণ খুচরা ক্রেতার কাছে। কাকডাকা ভোর থেকেই জমে উঠছে আমের হাট। জাতভেদে আম পাড়া চলবে জুন মাস পর্যন্ত।

বুধবার (২২ মে) সকালে দেখা গেছে, গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে আসছে সারি সারি আমভর্তি ভ্যান। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর শুধু আমের ভ্যান। আমের বাজারে তিল ধারণের জায়গা নেই। ক্রেতার ভিড়ও লক্ষণীয়। আমে ভরা সুলতানপুর বড়বাজার। যেদিকে তাকানো যাবে, সেদিকেই আম আর আম! সাতক্ষীরা বড়বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজ মোড়থেকে শুরুকরে বডড়বাজার পর্যন্ত বড়লম্বা লাইন। সারি সারি আমভর্তি ভ্যান ঢুকছে আর বের হচ্ছে।
এদিকে আমের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে দর কষাকষি। আম ব্যবসায়ী আনিচুর জানান, সাইজ ও রকমভেদে হিমসাগর আম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন, আমের সাইজ ও রং অনুযায়ী দামের হেরফের হচ্ছে। যে আমের সাইজ অনেক ভালো, তার দর বেশি। আম কিনতে আসা হাফিজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার আম মানে ব্র্যান্ড। দেশের অন্য জেলার আমের থেকে সাতক্ষীরার আম সুমিষ্ট ও স্বাদে অতুলনীয়। আম খেলে যাচাই করা যায়, এটা সাতক্ষীরার আম।

রাজশাহী থেকে আসা আম ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার আম আগে পাকে, তাই এ জেলার আমের চাহিদা দেশজুড়ে। আমি মূলত অনলাইনে আমের অর্ডার নিয়ে দেশজুড়ে সরবরাহ করি। আগের বছরের তুলনায় এবছর আম একটু দেরিতে বাজারে এসেছে। তবে চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সাতক্ষীরা বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রওশন আলী বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশনায় আম ভাঙা শুরুহয়েছে। আমে কেউ যেন কোনো ধরনের কেমিক্যাল মেশাতে না পারে সেটি তদারকি করা হবে।

তবে শহরে কুকরালি অঞ্চলের আমচাষি, রফিকুল,বাটকেখালির আজিজুল জানান, সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিন্ডিকেট করে আম কিনছে। ফলে আম চাষীরা আমের ন্যার্য দাম পাচ্ছে না। পাইকারী ব্যবসায়ী রজব আলী ও নুরুজ্জামান জানান, বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। সিন্ডিকেট থাকলে এবছর আমের দাম দ্বিগুণ থাকতো না।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ আম চাষি রয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছর চার হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়াা ও ১০ জুন আ¤্রপালি জাতের আম সংগ্রহ করা হবে। মনে রাখতে হবে, গাছের সব আম একসঙ্গে পাকে না। সুতরাং আমের রং আসার আগে তা না পাড়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

 

Please follow and like us:

Check Also

কারফিউর সময় ঢাকার রাস্তায় ‘ইউএন’ লেখা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমনের জন্য কারফিউ জারির পর ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল দেবার সময় ইউএন (ইউনাইটেড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।