এই বাজেট ঋণনির্ভর: জামায়াত

প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে ঋণনির্ভর বিশাল আকারের কল্পনা বিলাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বৃহস্পতিবার বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।

মিয়া গোলাম পরওৃয়ার বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকার ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নির্ভর বিশাল আকারের কল্পনা বিলাসী যে অবাস্তব বাজেট পেশ করেছেন, তাতে দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দিক নির্দেশনা নেই। অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক শিরোনামে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবে বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে এবং বিদেশে অর্থপাচারের ব্যবস্থা করে ও দুর্নীতিবাজদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এবার ব্যয় বেড়েছে ৮২ হাজার ৫ শত ৮২ কোটি টাকা। বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীবিদরা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয়সীমা গত বছরের মতই রাখা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্কখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি ও এলইডি তৈরির উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসি ও টিভির মূল্যসহ বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে সব পরিসংখ্যান ও নীতিবাক্য উচ্চারণ করেছেন তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা সমাধানের বাস্তব কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। বর্তমান সরকার গত ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য যে বাজেট পেশ করেছিল তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে লুটপাট করেছে। ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচার, শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিকখাতে দুর্নীতি রোধকল্পে বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবিত বাজেট দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করছে।

 

Please follow and like us:

Check Also

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, বাংলাদেশিদের মৌলিক স্বাধীনতা চর্চার সক্ষমতা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা আরও একবার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ২০শে জুলাই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।