রিজিকের একমাত্র উৎস ইজিবাইক নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি মামুন
নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘটনাটি সোমবারের (১০জুন)। সাতক্ষীরার আলোচিত লাল বাহিনীর কবলে পড়ে রিজিকের একমাত্র উৎস ইজিবাইক নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি মামুন। উপায়ন্তর না পেয়ে ফিরে আসতে হয় তাকে। এরপর মালিক সমিতির দারস্থ হন। বিচার চেয়ে অভিযোগ দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর। একান্ত নিরুপায় হয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব বরাবর দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ। তবে দ্বারস্থ হননি থানা পুলিশের।
এমন ঘটনা শুধু সোমবারের নয়। সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে যারা নিত্যদিন চলাচল করে বিষয়টি তারা খুব ভালোভাবে জানে। শতশত ইজিবাইক আটকে দেয়া হয় ওই সড়কে। গুঞ্জন রয়েছে ওই সড়কে চাঁদার তিনভাগের একভাগ যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। বাকি দুই ভাগ বাটোয়ারা হয় মালিক সমিতিসহ স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিসহ তার তৈরীকৃত লাল বাহিনীর সদস্যদের মাঝে। তবে বরাবরই এই লাল বাহিনীকে অস্বীকার করে চলেছে সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতি।
এরআগে ওই সড়কে লাল বাহিনীর কবলে পড়ে মারা যায় প্রীতম সানা নামে এক শিশু। চলতি বছরের ১৮জানুয়ারি সাতক্ষীরা- আশাশুনি সড়কের চাঁদপুর সংলগ্ন এলাকায় লাল বাহিনীর কবলে পড়ে প্রাণ হারাতে হয় শিশুটিকে। এরপর ওই সড়কে লাল বাহিনীর দৌরাত্ম্যে কমলেও সময়ের সাথে তাদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালক মামুনের ভাষায়, সবকিছু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে হচ্ছে। বাস মালিকরা মোটা টাকা দিতে পারে। তবে আমরা গরিব ইজিবাইক চালক তো আর সেই উৎকোচের টাকা দিতে পারবোনা। এজন্য বাস মালিকরা যা বলে থানা পুলিশ তাই শোনে। যদি সেটাই না হতো তাহলে প্রীতম সানার মৃত্যুর পর এই সড়কে লাল বাহিনী আবার কীভাবে ফিরলো?
আক্ষেপ করে মামুন বলেন, প্রীতম সানার মৃত্যুর দায় বাসমালিক সমিতিসহ প্রশাসনের। এদায় থেকে মুক্তির উপায় ছিলো সড়ক থেকে লাল বাহিনীকে উচ্ছেদ করা। যাতে আর কোন প্রীতম সানার মৃত্যু না ঘটে। কিন্তু, সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের কাঁধে অজ্ঞাত কারণে তারা সবাই নিশ্চুপ।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে মামুন বলেন, যাত্রীরা যদি বাসে না চড়তে চায়! এখানে আমাদের কী দোষ? বাসমালিক, শ্রমিকসহ ওই খাতের সংশ্লিষ্ট সকলের যেমন বউ-বাচ্চা, সংসার আছে। আমাদেরও আছে। তাদের যেমন মন চায় ওই খাতের আয়ের টাকা দিয়ে সন্তানের ভবির্ষত গড়তে। তেমন আমাদেরও মন চাই ইজিবাইক চালিয়ে সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করতে। এজন্য ওই সড়কে ঘটনার দিন কয়েকজন যাত্রী দিয়ে আশাশুনি মুখি যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে ভালুকা চাঁদপুর মাদ্রাসার মোড় পর্যন্ত পৌঁছালে আমার গাড়ির গতিরোধ করে কপিল নামে এক ব্যক্তি। সে ওই এলাকার লাল বাহিনীর একজন সদস্য। মামুন বলেন, গাড়ির গতিরোধ করে আমার যাত্রী নামিয়ে নেয়। যাত্রীরা নামতে না চাইলেও কপিল তাদের সাথে অকথ্য ভাষায় কথা বলতে থাকে। এসময় আমি প্রতিবাদ করতে গেলে সে আমার উপর তেড়ে আসে। আমাকে মারধর করতে আসে। ওইসময় কালু নামে এক মালিক সমিতির নেতার সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি বিষয়টি জানার পর ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগ নিয়ে বাসমালিক সমিতিতে গেলেও ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। বাধ্যহয়ে দায়িত্বরত একজনের কাছে অভিযোগ জমা দিয়ে এসেছি। আর ওই সড়কে যাতে ইজিবাইক চলতে পারে তার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে একটা আবেদন দিয়েছি। তবে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়নি।