শ্যামনগর প্রতিনিধি: শ্যামনগরে ১৫নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত উপকুল রক্ষা বাঁধে মারাত্মক ধস নেমেছে। গত শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ধসের এ ঘটনা সোমবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সুন্দরবন সংলগ্ন দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ৯নং সোরা গ্রামের মালিবাড়ি সংলগ্ন অংশে ঐ ধসের ঘটনা ঘটছে। টানা দু’দিনে সংলগ্ন অংশের প্রায় দুইশ ফুট বাঁধ পাশের খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়েছে। অব্যাহত ধসের ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন আতংক ভর করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ধসে যাওয়া অংশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অদ্যাবধি সেখানে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। বরং ‘জরুরী রক্ষণাবেক্ষণ’ নামে বারবার জোড়াতালি দেয়ায় প্রায়শই উক্ত এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৯নং সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দনসহ হরিশখালী এলাকায় টেকসই উপকুল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হলে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীনের শংকা রয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় ৯নং সোরা এলাকার মালিবাড়ি ও গাজিবাড়ী অংশে ১২/১৪ ফুট চওড়া উপকুল রক্ষা বাঁধের আড়াই থেকে তিন ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। প্রায় দুইশ ফুট জায়গাজুড়ে ধসের সৃষ্টি হওয়া ঐ অংশের কোন কোন স্থানে আবার মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত বাঁধ ‘ঠাঁই’ দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভাঙনের বিস্তৃতি রোধে একদিন আগে পাউবো’র পক্ষ থেকে প্লেসিংকৃত জিও ব্যাগগুলো ধসে যাওয়া অংশের পানিতে তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ জনবল বাড়িয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ প্লেসিং অব্যাহত রেখেছে। ভাঙন সংলগ্ন অংশে বসবাসরত মিলন হোসেন জানান প্রায় দু’বছর আগে থেকে গাবুরায় এক হাজার বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। অথচ ঠিকাদার নিযুক্ত না হওয়ার অজুহাতে তাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। এদিকে খোলপেটুয়া নদীর মধ্যভাগে বিশাল চর জেগে উঠায় স্রোত তাদের বাসতবাড়ি সংলগ্ন বাঁধে আঘাত করছে। এমতাবস্থায় অব্যাহতভাবে তাদের এলাকার বাঁধ ভাঙলেও দীর্ঘমেয়াদী কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা চরম ভাঙন আতংকে পড়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন বলেন গত এক বছরে সংলগ্ন এলাকার বাঁধে চার বার ধসের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা না নেয়ায় পর্যায়ক্রমে ভাঙন গোটা বাঁধকে প্রায় নদীতে মিশিয়ে দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে ৯ ও ১০ নং সোরা এবং হরিশখালীসহ গাবুরার ১২/১৪টি গ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান অপরাপর অংশে মেগা প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। অথচ হরিশখালী ও ৯ নং সোরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অংশে কাজ না হওয়ায় সেই এলাকা বার বার ভাঙছে। অব্যাহত ভাঙনের কারণে দৃষ্টিনন্দনের একমাত্র মিষ্টি পানির পুকুরসহ একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, গোটা গাবুরার প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকুল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ৪৮টি প্যাকেজ তৈরী করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬ নং প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যবধি কোন ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দন এলাকার ভাঙনের বিস্তৃতি ঠেকাতে পাঁচ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জরুরী রক্ষনাবেক্ষন কাজের আওতায় অপরাপর প্রকল্প থেকে সংগৃহীত প্রায় সারেড় সাতশ ব্যাগ ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত অংশে ডাম্পিং করা হয়েছে।