দ্বিতীয় সংসারের ছেলের ছাগলকাণ্ডে তছনছ হয়ে গেছে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের দীর্ঘদিনের সাম্রাজ্য। এসবের দায় চাপিয়ে মতিউর তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীকে ডিভোর্সের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, মতিউরের সাজানো রাজ্য এমনভাবে তছনছ হয়েছে যে, যাকে নিয়ে এই ছাগলকাণ্ড, সেই ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত মানসিক যন্ত্রণার কথা বলে স্ত্রীকে মালয়েশিয়া উড়িয়ে নিতে তাকে (মা শাম্মী) চাপ দিচ্ছেন, অন্যদিকে মতিউরের বোন তাকে (শাম্মী) ফোন করে ডিভোর্স লেটার পাঠাতে হুমকি দিচ্ছেন। ইফাতের আরেক বোন মাধবী ঢাকার একটি এলাকায় এখন ঘরবন্দি। মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হয়েও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তিনি ক্লাসে যাচ্ছেন না।
শাম্মী আখতারের চাচাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান আমার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তার সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই আছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা বুবলী ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। বুবলী এখন চট্টগ্রামে থাকেন। তার স্বামী থাকেন আমেরিকা। শ্যালক নকিব সম্প্রতি চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেছেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন।
আরিফুর বলেন, মতিউর হঠাৎ করে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে নির্দোষ ও আড়াল করতে স্ত্রী-সন্তানদের অস্বীকার করছেন। তবে এটা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।
জানা যায়, মতিউর রহমানের ব্যক্তিজীবন রহস্যঘেরা। বাইরে তিনি নিজেকে ধর্মভীরু বলে প্রচার চালালেও অন্দরমহলে তার চলাচল ছিল বেপরোয়া। মতিউর নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রতিদিন হাদিস ও আল কুরআনের বাণী আপ করতেন। অথচ তিনি অসৎপথে বিপুল ধনসম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসুন্ধরার বাসা থেকে বের হওয়ার পর কুড়িল বিশ্বরোড পৌঁছেই তিনি গাড়ি পরিবর্তন করতেন। কাকরাইলের এনবিআর অফিসে যেতে তিনি তিনবার পালটাতেন গাড়ি। এমনকি এক গাড়ির চালক আরেক গাড়ির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না। কবে কোন গাড়ি তিনি ব্যবহার করবেন, সেটাও চালকদের সবাই জানতেন না। নিজস্ব পরিকল্পনামাফিক চালকদের ফোন করে নির্ধারিত জায়গায় থাকতে বলতেন। কেন তিনি এটা করতেন, তা কেউ বলতে পারেনি। প্রতিদিন তিনি তার নিজের মনোরঞ্জনে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতেন বলেও জানা গেছে।