বসতভিটা হারিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কষ্টে আছে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো

যাওয়ার জায়গা থাকলে কী এই বৃষ্টিতে ভিজে এখানে পড়ে থাকতাম? সোমবার রাত থেকে বৃষ্টিতে কাক ভেজা ভিজেছি। সকালে পলিথিন কিনে সেটা টানিয়ে এক খাটে চার-পাঁচজন করে থাকছি। সোমবার রাতে খাওয়া হয়নি। কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো জানিনা। যা আয় করি পরিবারের ৫জন সদ্যসের কোন রকম চলে। জমি কিনবো কীভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের জন্য জায়গাসহ ঘর দিয়েছেন। ওই ঘরের জন্য চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরেছি। কোন লাভ হয়নি। আজ আমাদের বাড়ি ঘর ভেঙে দিয়েছে। শুকনা মৌসুমে ভাঙতে পারতো। বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবো, কোথায় গিয়ে থাকবো। নির্ঘুম রাত কেটেছে আমাদের। সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়কে দুই পাশের অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদের প্রথম দিন বসতভিটা হারিয়ে ছফুরননেছা মহিলা কলেজর সামনের মাঠে অবস্থান নেওয়া রোকনুজ্জামান এই কথাগুলো বলছিলেন।
সোমবার (১ জুলাই) সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রথম দিনে শেষ আশ্রয় ঘরবাড়ি হারিয়ে ছফুরননেছা মহিলা কলেজ সামনের সোমবার রাত থেকে অবস্থান নিয়েছে খোলা মাঠে। এখানে ৪০পরিবারেরর নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীসহ ১৬০জন মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতার জীবন যাপন করছে।


মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সড়কে দুই পাশের অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ অভিযান বাকাল ঢালীপাড়া এলাকায় শেষ করে তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে ফিরে যাচ্ছে। এদিকে কোল্ডস্টোরেজ মোড়ের জামিয়াতুল উলুম মাদ্রার সামেন সড়ক বিভাগের জায়গায় পরিবার নিয়ে বাস করতেন নুরুজ্জামান। অভিযানে তার ঘরটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির দিনে পরিবারকে নিয়ে থাকার জন্য পলিথিন টানিয়ে কোন রকম থাকার ব্যবস্থা করছেন। ইটাগাছ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বাঁকাল ঢালীপাড়া পর্যন্ত এইরকম অনেক দৃশ্য দেখা গেছে।
এদিকে ছফুরননেছা মহিলা কলেজর সামনের মাঠে সারাদিনের বৃষ্টিতে পানি ও কাদার সৃষ্টি হয়েছে। উপরে পলিথিন দিয়ে নিচে চৌকি পেতে বসে আসে নারী, শিশু, বৃদ্ধা। সবার চোখে মুখে ক্লান্তি ও অনিশ্চিয়তার ছাপ। কোথায় যাবেন কোথায়, কোথায় থাকবেন জানা নেই এই বাস্তুহারা মানুষগুলোর।

 


এর একজন রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে ভেঙে দেওয়ার পর অধিকাংশ মানুষ না খেয়ে দিন কাটিয়েছে। খাবে কী করে রান্না করার চুলা নেই। সকালে একজন খিচুড়ি রান্না করে পাঠিয়েছে। অল্প অল্প করে কিছু খেয়েছে। আজ দুপুরে কাউন্সিলর খেচুড়ি রান্না করে পাঠিয়েছে সেগুলো ভাগ করে খেয়েছি। এখানে ৪জন প্রতিবন্ধী, চারজন বৃদ্ধসহ ১৫জন শিশু আছে। গতকাল রাতে আমাদের খুইব কষ্ট হয়েছে। এখানে ৪০ পরিবারেরর নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীসহ ১৬০জন মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতার জীবন যাপন করছে।
খাদিজা নামে একজন বলেন, ঘর ভেঙে দেওয়ার কারণে সারাদিন খাওয়া হয়নি। রাতে বৃষ্টিতে ঘুমাতে পারিনি। গতকাল সোমবারের রাতটি আমাদের খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। পানি নেই, বাথরুম নেই। থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যাওয়ার জায়গা নেই। যাবো কোথায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ভূমিদস্যুরা বাঁকালে অনেক সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে। এছাড়াও সরকারি অনেক খাস জমি আছে। সেখানে আমাদের জমি দেওয়া দাবী করছি। আমরাও চাইনি এভাবে রাস্তার পাশে বসবাস করতে। কিন্তু কি করবো জমি কিনে বাড়ি করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমাদের অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও একটি ঘরের ব্যবস্থা হয়নি। শুনলাম সাতক্ষীরাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে আমরা কি ভূমিহনী না। আমরা কী এদেশের মানুষ না। আমাদের কী কেউ খোজ নেবে না। ঘর ভাঙার পর থেকে প্রশাসনের কেউ আমাদের কোন খোঁজ নেইনি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, রাস্তা চার লেন হোক এটি আমার চাই। কিন্তু সড়ক বিভাগের যে জায়গায় দীর্ঘদিন পড়েছিলো। সেখানে শতশত ভূমিহীন মানুষ বসবাস করতো। যাদের বাড়ি নেই, ভূমি নেই তারা সেখানে বসবাস করবে এটা স্বাভাবিক। তাদের কোন প্রকার পুনর্বাসন না করে তাদের এভাবে উচ্ছেদ করা উচিত হচ্ছে না। সাতক্ষীরা অনেক সরকারি খাস জমি আছে। সেখানে তাদের ব্যবস্থা করতো পারতো। তারা আগে থেকেই ভূমিহীন ছিলো। সরকারি জায়গায় বসবাস করতো। এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এই মানুষগুলো রাস্তায় উঠে গেল। এই বৃষ্টির মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কোথায় যাবে। তারা আজ বাস্তুহারা হয়ে গেল। আমাদের দাবী এই মানুষগুলোর জায়গা দিয়ে পুনর্বসান করে তার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা। ভূমিদস্যুরা হাজার হাজার সরকারি জায়গা দখল করে ধান ও মাছ চাষ করছে তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আমাদের দাবী ভূমিদস্যুরা বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হোক।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন গৃহহীন মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সাতক্ষীরাকে ভূমিহীন, গৃহহীন ও ভিক্ষুকমুক্ত জেলা ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু বিনা নোটিশে অল্প সময়ে জোর করে এই গরীব অসহায় মানুষকে এইভাবে উচ্ছেদ করে সরকারের সুনাম নষ্ট করতে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।