টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকার কিশোর-তরুণদের ১১ জনের একটি দল নৌকায় চড়ে ঢাকায় এসেছে। মির্জাপুর থেকে ধলেশ্বরী নদী দিয়ে তুরাগ হয়ে তাদের যাত্রা ছিল রাজধানীর মিরপুরের দিয়াবাড়ি ঘাট পর্যন্ত। সেখান থেকে তারা বেড়াতে গিয়েছিল মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে।
কিন্তু টিকিট কাটতে গিয়ে জানতে পারেন, ফি বাড়ানো হয়েছে। জনপ্রতি দিতে হবে ১০০ টাকা। আগে সেই ফি ছিল ২০ টাকা করে। কিশোর-তরুণদের দলটি জনপ্রতি ৩০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু টিকিট কাউন্টারে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা ইজারাদারের প্রতিনিধিরা জানান, ১২ বছরের কম বয়সীদের টিকিটের যে মূল্য, জনপ্রতি সেই ৫০ টাকা দিতে হবে। তারপর আরও কিছুক্ষণ চলে দর–কষাকষি। শেষে উদ্যানে প্রবেশ না করে ফটকের সামনে থেকেই তাঁরা ১১ জন ফিরে যান।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে কথা হয় ওই দলের কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে বয়সে বড় জনি মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেরবার যখন এসেছিলাম, তখন ছিল ২০ টাকা (প্রবেশ ফি)। আজকে এসে জানলাম ১০০ টাকা। এত টাকা তো সবার সঙ্গে নেই।’
মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের ফি একলাফে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০ টাকা। আজ থেকে এই ফি আদায় শুরু হয়েছে। আগে উদ্যানে প্রবেশের ফি ছিল মাত্র ২০ টাকা।
আজ বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে ছিলেন এই প্রতিবেদক। এ সময় ফি বাড়ানোর কারণে মির্জাপুরের ওই দলের সদস্যদের মতো উদ্যানে বেড়াতে যাওয়া বেশ কিছু মানুষকে ফিরে যেতে দেখেন। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ ১২ বছর বয়সের বেশি হলেও ইজারাদারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে টিকিট নেন ১২ বছরের নিচের বয়সীদের, অর্থাৎ ৫০ টাকায়। কিছু পরিবার কিংবা বন্ধুদের ৫-৬ জনের দলের ক্ষেত্রে ইজারাদারের পক্ষ থেকে একজনের টিকিটের মূল্য, অর্থাৎ ১০০ ছাড় দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ইজারাদারের প্রতিনিধি একলাস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবেশ ফি যেটা বাড়ানো হয়েছে, সেটা আজ থেকে আদায় শুরু হয়েছে। বিষয়টি অনেকেই জানেন না। তাই আজ ইজারাদারের পক্ষ থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
মিরপুর-১২ নম্বরের বাসিন্দা আতাউর রহমান ও কানিজ বেগম দম্পতি চার বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। চিড়িয়াখানায় বেড়ানো শেষে তাঁদের ইচ্ছা ছিল, বোটানিক্যাল গার্ডেনেও কিছুটা সময় কাটাবেন। কিন্তু টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা হওয়ায় এই দম্পতির আর ভেতরে ঢোকা হয়নি।
আতাউর রহমান বলেন, ‘আমার আর স্ত্রীর জন্য ২০০ টাকা লাগবে। ছেলের জন্য দিতে হবে আরও ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে আড়াই শ টাকা। আগে যেখানে তিনজনের জন্য লাগত মাত্র ৬০ টাকা। মানে আগের থেকে ১৯০ টাকা বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই টাকা অনেক বেশি। তাই আর ভেতরে ঢুকলাম না।’
বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই জাতীয় চিড়িয়াখানা। প্রবেশ ফি বেশি শুনে অনেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফটক থেকে ফিরে গিয়ে চিড়িয়াখানায় প্রবেশের টিকিট কাটছেন। সেখানকার টিকিটের দাম ৫০ টাকা।
বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি ২০ থেকে একলাফে ১০০ টাকা
ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চার-পাঁচ হাজার দর্শনার্থী আসেন। অন্যান্য দিনে এ সংখ্যা দুই থেকে আড়াই হাজার। কিন্তু আজ সারা দিনে টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১০০টির মতো। সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে দর্শনার্থী হয়তো আজ কিছুটা কম। তবে টিকিটের দাম বাড়ানোর কারণে কিছু লোককে তিনিও ফিরে যেতে দেখেছেন বলে জানালেন।
এদিকে যে দর্শনার্থীরা বোটানিক্যাল গার্ডেনে আজ বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁদেরও দাবি, প্রবেশ ফি অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফি কমানোর দাবি জানান তাঁরা।
উদ্যানটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। উদ্যানের প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ বাড়ানোটা কিছুটা অযৌক্তিক বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত।
আজ সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, এতটা বাড়ানো ঠিক হয়নি। আর এটাকে বাণিজ্যিকভাবে দেখাও উচিত না বলে মনে করেন তিনি। অনেক দিনের প্রক্রিয়ায় এটি হয়েছে জানিয়ে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, তাঁরা এটা দেখবেন।